পৃথিবীর অন্য প্রান্তে, দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীর বুকে জেগে ওঠা একটি দ্বীপ, ‘সান্তা রোসা’। জায়গাটি পেরু, কলম্বিয়া আর ব্রাজিলের সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত।
এই দ্বীপকে কেন্দ্র করে কয়েক দশক ধরে চলছে পেরু ও কলম্বিয়ার মধ্যে সীমান্ত বিবাদ। বিষয়টি বাংলাদেশের মানুষের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমাদের দেশেও নদ-নদী এবং সীমান্ত নিয়ে এমন অনেক সমস্যা রয়েছে।
বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন এবং ভূমি ক্ষয়ের মতো ঘটনাগুলো এখানকার মানুষের জীবনকে কঠিন করে তুলেছে।
সান্তা রোসা দ্বীপটির আয়তন নদীর স্রোতের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। বর্ষাকালে যখন নদীর জল বাড়ে, তখন দ্বীপের অনেক অংশ জলের নিচে চলে যায়।
আবার শুষ্ক মৌসুমে জেগে ওঠে নতুন চর। স্থানীয় বাসিন্দারা এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে বাধ্য হন।
কেউ কেউ শুকনো মৌসুমে হেঁটে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যান, আবার বর্ষায় নৌকায় করে চলাচল করেন।
দ্বীপের প্রায় ৩ হাজার মানুষের জীবনযাত্রা নদীর সঙ্গেই বাঁধা। তাদের জীবন ধারণের প্রধান উপায় হলো মাছ ধরা এবং পর্যটন।
তবে এখানকার জীবন মোটেও সহজ নয়। কারণ, এখানকার জলবায়ু পরিবর্তনশীল। গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, বন্যা এবং খরা উভয়ই বাড়ছে।
পর্যাপ্ত অবকাঠামো, স্বাস্থ্য পরিষেবা কিংবা উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। বিদ্যুতের ব্যবস্থা হলেও তা সবসময় পাওয়া যায় না।
পেরু এবং কলম্বিয়ার মধ্যে এই দ্বীপ নিয়ে বিবাদের মূল কারণ হলো, দুই দেশের সীমান্ত নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা। ১৯২২ সালের একটি চুক্তি অনুযায়ী, এই অঞ্চলের সীমান্ত নির্ধারিত হয়েছিল।
সেই চুক্তিতে নদীর গভীরতা অনুযায়ী সীমান্ত চিহ্নিত করার কথা বলা হয়। কিন্তু নদীর গতিপথ সব সময় একই রকম থাকে না।
ফলে, নদীর গতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সীমান্তও নতুন করে চিহ্নিত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
পেরু মনে করে, সান্তা রোসা তাদের অংশ। কারণ, এখানকার বাসিন্দাদের বড় একটি অংশ নিজেদের পেরুর নাগরিক হিসেবে পরিচয় দেয় এবং দ্বীপটি পেরুর প্রশাসনিক কাঠামোর অধীনে রয়েছে।
অন্যদিকে, কলম্বিয়ার দাবি, এই দ্বীপ তাদের। কারণ, তাদের মতে, যখন সীমান্ত চুক্তি হয়, তখন এই দ্বীপের অস্তিত্ব ছিল না।
সান্তা রোসা দ্বীপটি কৌশলগতভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি পেরু, কলম্বিয়া ও ব্রাজিলের সংযোগস্থলে অবস্থিত।
এই কারণে বাণিজ্য ও ভ্রমণের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখানকার স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা চলে।
স্থানীয়রা পেরু, কলম্বিয়া এবং ব্রাজিলের পরিচয়পত্র বহন করেন।
এই দ্বীপের মানুষের জীবনযাত্রা নদীর মতোই অনিশ্চিত। এখানকার মানুষগুলো প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে জীবন ধারণ করে।
একদিকে যেমন নদীর পানি তাদের জীবিকার উৎস, তেমনি এই পানিই তাদের বসতভিটা কেড়ে নিতে পারে।
সান্তা রোসার এই গল্পটি বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয়। কারণ, আমাদের দেশেও নদী ভাঙন একটি বড় সমস্যা।
বিশেষ করে, ব্রহ্মপুত্র ও পদ্মা নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষ প্রায়ই ভূমি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদীর আচরণ আরও বেশি অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।
তাই, সান্তা রোসার এই সীমান্ত বিবাদের গল্প আমাদের দেশের নদী ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন