মেক্সিকোতে তাণ্ডব, দুর্বল হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়! চরম সতর্কবার্তা!

ক্যারিবিয়ান সাগরে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসা ‘ট্রপিক্যাল স্টর্ম মেলিসা’ নামক ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন, এটি ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে হারিকেনে পরিণত হতে পারে।

ঘন্টায় মাত্র ২ মাইল গতিতে এটি অগ্রসর হচ্ছে, যা একজন মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কম। এমন ধীরগতি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য একটি বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হতে পারে, কেননা এর ফলে দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিপাত হতে পারে এবং ব্যাপক বন্যার আশঙ্কা থাকে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, হারিকেন বা ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ ও তীব্রতা নির্ধারণ করে থাকে অন্যান্য আবহাওয়াগত বিষয়গুলি, যেমন – শীতল বায়ুপ্রবাহ অথবা জেট স্ট্রিমের দুর্বলতা। মেলিসার ক্ষেত্রে এই প্রভাবগুলি দুর্বল হওয়ায় এটি দিনের পর দিন একই স্থানে ঘুরপাক খাচ্ছে।

এর ফলে আশেপাশের অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হতে পারে, যা জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে তোলে।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) আবহাওয়াবিদ কেরি ইমানুয়েল জানিয়েছেন, “এ বছর ক্যারিবিয়ান সাগরের জল অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশ উষ্ণ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড়টি আরো শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ পেতে পারে।”

তিনি আরো উল্লেখ করেন, সাধারণত শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহের কারণে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সহজে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে দেখা যায় না। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি মেলিসার মতো ঘূর্ণিঝড়ের ধীর গতিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আটলান্টিক অঞ্চলে, বিশেষ করে স্থলভাগের কাছাকাছি ঘূর্ণিঝড়ের গতি কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে অনেকে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে দায়ী করছেন।

ধীর গতির ঘূর্ণিঝড় সাধারণত বেশি সময়ের জন্য বৃষ্টি ঝরায়, যা বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করে।

তবে, গ্লোবাল রিস্ক অ্যান্ড রেইনস্যুরেন্স কোম্পানি গাই কার্পেন্টারের আবহাওয়াবিদ কিয়েরান ভাটিয়া বলছেন, “মানব সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই পরিবর্তন হয়েছে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।” জাতিসংঘের আন্তঃসরকার জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেলের (আইপিসিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদনেও এই বিষয়ে নিশ্চিত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে, হারিকেন বিশেষজ্ঞ জেমস কোসিন এবং তার সহকর্মীরা তাদের গবেষণায় ঘূর্ণিঝড়ের গতি কমার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তাদের মতে, বায়ুমণ্ডলের উচ্চ স্তরের বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তনের কারণে এমনটা হতে পারে, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে সম্পর্কিত।

অতীতে ধীর গতির ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতির উদাহরণও রয়েছে। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে আঘাত হানা হারিকেন হার্ভে ছিল এর অন্যতম উদাহরণ।

হার্ভের প্রভাবে সেসময় প্রায় ১৫৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একটি রেকর্ড।

মেলিসার ধীর গতির কারণে জ্যামাইকা এবং হিসপানিওলার মতো দ্বীপগুলোতে বন্যার চরম ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর কারণ হলো, এই ঘূর্ণিঝড়টি দীর্ঘ সময় ধরে স্থলভাগের কাছাকাছি অবস্থান করবে এবং এখানকার উঁচু পর্বতমালা বৃষ্টির জলকে ধারণ করে রাখে, ফলে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা অনেক বেশি।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষও যেহেতু ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকে, তাই এই ধরনের খবর তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং ঘূর্ণিঝড়ের গতি কমার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা এখনো চলছে। তবে, এটা নিশ্চিত যে, উষ্ণ সমুদ্র এবং বায়ুমণ্ডলের কারণে ঘূর্ণিঝড়গুলো আগের চেয়ে বেশি বৃষ্টি ঝরাচ্ছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *