গরুর মাংস আমদানি: ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ফুঁসছে মার্কিন কৃষক, বাড়ছে উদ্বেগ!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশটির কৃষক সমাজকে বিভক্ত করে দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন আর্জেন্টিনা থেকে গরুর মাংস আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

এই পদক্ষেপের কারণে তাঁরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হলো—যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংসের উচ্চ মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা।

বর্তমানে, আর্জেন্টিনা থেকে স্বল্প শুল্কে বছরে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন মাংস আমদানি করা হয়। প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই পরিমাণ বেড়ে ৮০ হাজার মেট্রিক টনে পৌঁছাতে পারে।

এর ফলে, স্থানীয় খামারিরা আশঙ্কা করছেন, আর্জেন্টিনার সস্তা মাংস তাঁদের ব্যবসার জন্য ক্ষতির কারণ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক গবাদি পশু খামারি মনে করেন, ট্রাম্প তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন।

কারণ, তাঁরাই সাধারণত বিভিন্ন নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রতি সমর্থন জানিয়ে থাকেন। ইলিনয়ের একজন গবাদি পশু খামারি ক্রিশ্চিয়ান লাভেল বলেছেন, “মনে হচ্ছে, আমাদের বিদেশি প্রতিযোগীদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে, ট্রাম্প এই সমালোচনার জবাবে বলেছেন, “গরু খামারিদের আমি ভালোবাসি। কিন্তু তাঁরা বুঝতে পারছেন না যে, তাঁদের ভালো অবস্থার কারণ হলো—যুক্তরাষ্ট্রে গরু আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

তিনি আরও যোগ করেন, “ভোক্তাদের সুবিধার বিষয়টিও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যাটলমেন’স বিফ অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কলিন উডল বলেছেন, “আমরা প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারছি না। কারণ, এটি পরিবারের খামারি ও পশু পালনকারীদের ভবিষ্যৎকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংসের দাম বাড়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। সাম্প্রতিক খরা এবং পশুখাদ্যের উচ্চ মূল্য, গবাদি পশুর সংখ্যা হ্রাস করেছে।

এছাড়াও, মেক্সিকোতে মাংসখেকো পরজীবীর প্রাদুর্ভাবের কারণেও মাংসের আমদানি কমে গেছে। আরেকটি বিষয় হলো—সয়াবিন চাষিরাও ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

চীন, যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল। কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে চীন এখন আর সেই সয়াবিন কিনছে না। ফলে, অনেক সয়াবিন চাষি তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না।

মার্কিন কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, তারা কৃষকদের সহায়তার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে—ভূমি ব্যবহারের সুযোগ বাড়ানো এবং পশু পালনে আগ্রহী সামরিক বাহিনীর প্রাক্তন সদস্যদের সহায়তা করা।

তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট নয়। তাঁদের মতে, একটি ন্যায্য বাজার তৈরি করা এবং স্থানীয় খামারিদের উৎসাহিত করা প্রয়োজন।

এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, বিশ্ব বাণিজ্য চুক্তি এবং সরকারের নীতিগুলো কীভাবে কৃষকদের জীবনকে প্রভাবিত করে, সেই বিষয়টি আবারও সামনে চলে এসেছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *