জাপানের নতুন নেতার সামরিক শক্তি বাড়ানোর ঘোষণা: উত্তেজনা বাড়ছে!

জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষাখাতে ব্যয় আরও বাড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, বাড়ছে আঞ্চলিক উত্তেজনা।

জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পরপরই দেশটির সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার এক গুরুত্বপূর্ণ নীতি-নির্ধারণী বক্তৃতায় তিনি জানান, চীন, উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়ার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে জাপান তার নিরাপত্তা কৌশল আরও দ্রুততার সঙ্গে ঢেলে সাজাবে।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি ছিল তাকাইচির প্রথম বড় ধরনের ভাষণ। তিনি জানান, শুরুতে ২০২৭ সাল পর্যন্ত সামরিক ব্যয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, সেটি এখন মার্চ মাসেই অর্জনের চেষ্টা করা হবে। সেই হিসেবে, জাপানের জিডিপির ২ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করা হবে।

এছাড়াও, নিরাপত্তা বিষয়ক কৌশলটি ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সাধারণত, জাপান প্রতি দশ বছর পর তাদের নিরাপত্তা কৌশল পর্যালোচনা করে থাকে। সবশেষ তারা এটি সংশোধন করেছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতসহ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও যোগ করেন, “ঐতিহাসিক ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তনের ফলে আমরা যে মুক্ত, উন্মুক্ত ও স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত ছিলাম, তা এখন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জাপান সংলগ্ন অঞ্চলে চীন, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ।”

জাপানের প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার কয়েক দিন পরেই, আগামী ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাপান সফরের কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সফরে ট্রাম্প জাপানের প্রতিরক্ষা ব্যয় আরও বাড়ানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক অস্ত্র কেনার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারেন।

ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তাকাইচি জানিয়েছেন, তিনি দু’দেশের মধ্যেকার পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র-জাপান সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চান।

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জাপান চীনের সঙ্গে গঠনমূলক ও স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, তবে নিরাপত্তা নিয়ে কিছু উদ্বেগ রয়েছে।”

বিশ্লেষকদের মতে, তাকাইচির রক্ষণশীল রাজনৈতিক অবস্থান, যুদ্ধকালীন ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ধারণা এবং ইয়াসুকুনি মন্দিরে তাঁর নিয়মিত পরিদর্শন—এসব কারণে বেইজিংয়ের সঙ্গে টোকিওর সম্পর্কে অবনতি হতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের ঔপনিবেশিক শাসনের শিকার হওয়া বিভিন্ন দেশের মানুষ ইয়াসুকুনি মন্দিরকে তাঁদের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের স্থান হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।

জাপানের নিরাপত্তা কৌশল আপগ্রেড করার ফলে দেশটির আত্মরক্ষা বাহিনী বা সেল্ফ-ডিফেন্স ফোর্সের জন্য আরও আক্রমণাত্মক ভূমিকা তৈরি হতে পারে, অস্ত্র রপ্তানির বিধিনিষেধ শিথিল করা হতে পারে এবং সামরিক ব্যয়ও বাড়তে পারে।

তবে, এসব পদক্ষেপের জন্য কীভাবে অর্থ সংগ্রহ করা হবে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

সরকারের গৃহীত যেকোনো নীতি বাস্তবায়নের জন্য বিরোধী দলগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। এছাড়াও, বর্তমানে জাপানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং মজুরি হ্রাসের মতো অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাকাইচিকে। একইসঙ্গে, রক্ষণশীলদের সমর্থন ফিরে পাওয়াটাও তাঁর জন্য জরুরি।

উল্লেখ্য, জাপানে দ্রুত জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণে বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। তবে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শুধুমাত্র নিয়ম মেনে চলা বিদেশিদেরই তিনি স্বাগত জানাবেন।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *