ক্যারিবিয়ান সাগরে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মেলিসা’, তীব্র বৃষ্টির আশঙ্কায় হাইতি, জ্যামাইকা ও ডোমেনিকান রিপাবলিকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এই ঘূর্ণিঝড়টি দ্রুত শক্তিশালী হয়ে Category 4 মাত্রার হারিকেনে পরিণত হতে পারে।
এতে করে হাইতি, জ্যামাইকা এবং ডোমেনিকান রিপাবলিকের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসের সম্ভবনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের পরিচালক মাইকেল ব্রেনান জানিয়েছেন, ‘বৃষ্টিপাতের কারণে এই ঘূর্ণিঝড়টি একটি বড় ধরনের ঝুঁকির কারণ হতে পারে। ক্যারিবীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় ও হারিকেনের কারণে জীবনহানির প্রধান কারণ হলো এই বৃষ্টি।’
মেলিসা বর্তমানে জ্যামাইকার কিংস্টন থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং হাইতির পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।
এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার এবং এটি ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটার বেগে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
জ্যামাইকা এবং হাইতির দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে হারিকেন সতর্কতা ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, মেলিসা শনিবারের মধ্যে হারিকেনে এবং সপ্তাহ শেষের মধ্যে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে, যা Category 4 মাত্রায় পৌঁছাতে পারে।
জ্যামাইকার পূর্বাঞ্চলে ৩৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এছাড়াও, সম্প্রতি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সেখানকার মাটি এরই মধ্যে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে।
জ্যামাইকাতে স্কুল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং সরকারি অফিসগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হারিকেন সতর্কতা জারি করা হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হবে।
জ্যামাইকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ম্যাথিউ সামুদা জানিয়েছেন, ‘পরিস্থিতি সত্যিই গুরুতর। ঝড়ের বর্তমান গতি এবং শক্তি দেখে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ পরিস্থিতি যেকোনো মুহূর্তে পরিবর্তন হতে পারে।’
হাইতি ও ডোমেনিকান রিপাবলিকের দক্ষিণাঞ্চলে ৩৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে হাইতিতে ঝড়ের কারণে একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরো পাঁচজন আহত হয়েছে।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে হাইতির দক্ষিণাঞ্চলে ১০০টির বেশি জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে।
মেলিসার প্রভাবে ডোমেনিকান রিপাবলিকে পানির সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে, যার ফলে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়াও, গাছপালা উপড়ে গেছে এবং কিছু জায়গায় ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে।
ডোমেনিকান রিপাবলিকে শুক্রবার সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং ১২টি প্রদেশে সরকারি অফিসও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
দেশটির জরুরি বিভাগের পরিচালক জুয়ান ম্যানুয়েল মেনদেজ গার্সিয়া জানিয়েছেন, ‘আমাদের এই পরিস্থিতির দিকে প্রতিটি মুহূর্ত নজর রাখতে হবে।
সতর্কতামূলক এলাকার বাসিন্দাদের অবশ্যই সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’
আটলান্টিক মহাসাগরে চলতি হারিকেন মৌসুমে এটি ১৩তম ঘূর্ণিঝড়।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) জানিয়েছে, এই বছর ১৩ থেকে ১৮টি ঘূর্ণিঝড় হতে পারে, যার মধ্যে ৫ থেকে ৯টি হারিকেনে এবং ২ থেকে ৫টি শক্তিশালী হারিকেনে রূপ নিতে পারে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, ঘূর্ণিঝড়ের এই মৌসুম ১ জুন থেকে শুরু হয়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস