নিজের ছেলেকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন, ১৩ বছর পর মুখ খুললেন মা!

শিরোনাম: ছেলেকে খুনী হিসেবে ধরিয়ে দেওয়া মায়ের ১৩ বছর পর মুখ খোলা: শোক আর অনুশোচনার এক হৃদয়বিদারক গল্প

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোতে ঘটে যাওয়া একটি মর্মান্তিক ঘটনার ১৩ বছর পর মুখ খুলেছেন মিন্ডি সিগ। তার ১৭ বছর বয়সী ছেলে, অস্টিন রিড সিগ, ২০১৩ সালে ১০ বছর বয়সী জেসিকা রিজওয়ে'কে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়। জেসিকার মৃত্যুরহস্য উন্মোচনে নিজের ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন মিন্ডি, যা ছিল একজন মায়ের জন্য সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তগুলোর একটি।

এই ঘটনার পর তিনি যে মানসিক যন্ত্রণা ও সামাজিক প্রতিকূলতার শিকার হয়েছেন, সেই গল্পই এবার শোনাচ্ছেন তিনি।

২০১২ সালের অক্টোবরের এক সন্ধ্যায়, ডেনভারের শহরতলীতে, যখন জেসিকা নামের ছোট্ট মেয়েটির স্কুলের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল, তখন কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি কী ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে তার জন্য। জেসিকা নিখোঁজ হওয়ার পর পুরো এলাকা জুড়ে শুরু হয় ব্যাপক তল্লাশি।

স্থানীয় পুলিশ, এফবিআই এবং শত শত স্বেচ্ছাসেবক দিনরাত এক করে খুঁজেছিলো শিশুটিকে। কিন্তু কয়েকদিন পরেই জানা যায়, জেসিকা আর নেই।

ঘটনার কয়েক দিন পর, মিন্ডি সিগ তার বাড়িতে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাক্ষী হন। তার ছেলে, অস্টিন, তার কাছে জেসিকাকে হত্যার কথা স্বীকার করে। মুহূর্তের মধ্যে যেন আকাশ ভেঙে পড়ে মিন্ডির ওপর।

অন্যদিকে সমাজের চোখে মুখ দেখানোর উপায় নেই। দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পর তিনি দ্রুত পুলিশকে ফোন করেন এবং ছেলেকে আত্মসমর্পণের জন্য রাজি করান।

মায়ের এই সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে জেসিকার পরিবার গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। জেসিকার মা সারা রিজওয়েল সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “নিজের সন্তানের থেকেও মিন্ডি আমাদের মেয়ের কথা বেশি ভেবেছেন।

তিনি যদি লুকোচুরি করতেন, তাহলে হয়তো আরও অনেক শিশুর জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। আমরা প্রতিদিন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”

আদালতে অস্টিন সিগের বিরুদ্ধে আনা হয় একাধিক অভিযোগ। জেসিকাকে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যার পাশাপাশি, এর আগেও সে আরও একজন নারীর ওপর হামলা চালিয়েছিল। বিচারের রায়ে, অস্টিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ছেলের এই জঘন্য অপরাধের কারণে মিন্ডি সিগকে দীর্ঘকাল ধরে মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পরে তিনি তীব্র অনুশোচনায় ভুগেছেন।

সমাজের চোখে তিনি যেন অপরাধীর মা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন। এমনকি, তিনি আত্মহত্যার কথাও ভেবেছেন।

মিন্ডি সিগ জানান, তিনি জেসিকার পরিবারের সঙ্গে কখনোই কথা বলেননি। তাদের মুখোমুখি হতে ভয় পেতেন তিনি। কিন্তু জেসিকার পরিবারের কাছ থেকে তিনি যে সহানুভূতি ও সমর্থন পেয়েছেন, তা হয়তো তাকে এই কঠিন সময়ে কিছুটা হলেও সাহস জুগিয়েছে।

এই ঘটনার পর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। মিন্ডি সিগ এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন। নিয়মিত থেরাপির মাধ্যমে তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করেছেন।

তবে, তিনি এখনো বিশ্বাস করেন, জেসিকার জীবন ফিরিয়ে আনতে পারলে, তিনি নিজের জীবন দিতেও প্রস্তুত ছিলেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *