বিক্ষোভের পর যুবকদের জনজীবনে অংশগ্রহণের আহ্বান: মরক্কোর মসজিদে তেলাওয়াত

মরক্কোতে সম্প্রতি সরকার বিরোধী বিক্ষোভের পরে, দেশটির মসজিদগুলোতে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ খুতবা, যেখানে যুবকদের জনজীবনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হচ্ছে। বিক্ষোভগুলো মূলত দেশটির সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নয়নের দাবিতে ছিল।

খবর অনুযায়ী, সরকারি নির্দেশে তৈরি করা এসব খুতবা দেশটির প্রায় ৫৩ হাজার মসজিদে পাঠ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বিক্ষোভের মূল কারণ ছিল ২০৩০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য অবকাঠামো খাতে সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় করা নিয়ে অসন্তোষ। বিক্ষোভকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ডিসকর্ডের মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছিল।

তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। তাদের মূল দাবি ছিল, সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত, তাই এর পতন ঘটাতে হবে।

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, তারা তরুণ বিক্ষোভকারীদের অভিযোগগুলো শুনেছে এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা ও বিতর্কের প্রস্তাব দিয়েছে।

দেশটির বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তরুণদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে, ৩৫ বছরের কম বয়সীদের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিয়ম সহজ করা এবং তাদের নির্বাচনী প্রচারণার জন্য ৭৫ শতাংশ অর্থ সহায়তা করা।

সরকার আগামী ২০২৬ সালের বাজেটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে।

এই খাতে ১৫ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকা) বরাদ্দ করা হবে।

এছাড়া, এই দুই খাতে ২৭ হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে এবং ৯০টি হাসপাতালের আধুনিকীকরণ করা হবে।

খুতবায় ইমামরা সাধারণত সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

তবে, সমালোচকদের মতে, বর্তমানে সরকার নিয়ন্ত্রিত খুতবাগুলো রাষ্ট্রের নীতি সমর্থন এবং সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

রাবাতে এক মসজিদের ইমাম তার খুতবায় যুবকদের জনজীবনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের ওপর জোর দেন।

তিনি বলেন, দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং এর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় যুবকদের এগিয়ে আসা উচিত।

এদিকে, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে ১৫০০ জনের বেশি মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

এছাড়া, দেশটির আদালত বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ৩৩ জনকে ২৬০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকার একদিকে যেমন তরুণদের প্রতি নমনীয় হওয়ার বার্তা দিচ্ছে, তেমনি তাদের ওপর নজরদারিও চালাচ্ছে।

অনেকের ধারণা, এই খুতবাগুলো তরুণদের রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করার একটি কৌশল হতে পারে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *