ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় ‘মেলিসা’র আঘাতে লণ্ডভণ্ড জ্যামাইকা, আবহাওয়ার পরিবর্তনে বাড়ছে উদ্বেগে বিশ্ব।
জ্যামাইকা দ্বীপে আঘাত হেনেছে ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মেলিসা’। Category 5 মাত্রার এই ঘূর্ণিঝড়টি গত ১৭৪ বছরের মধ্যে জ্যামাইকাতে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালে এটি জ্যামাইকার দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে উত্তর দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়।
ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দ্বীপটি, জানিয়েছে দেশটির সরকার।
জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হলনেস জানিয়েছেন, এই ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে এখানকার কোনো অবকাঠামোই তা সহ্য করতে পারবে না। এখন তাদের মূল চ্যালেঞ্জ হলো দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা।
ঝড়ের কারণে ভূমিধস, গাছ উপড়ে পড়া এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। উদ্ধার ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে বেশ সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, জ্যামাইকার দক্ষিণে প্রায় ১৩ ফুট পর্যন্ত উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। উপকূলের কিছু হাসপাতালে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রোগীদের নিচতলা থেকে দ্বিতীয় তলায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষের আশা, এতে তারা সুরক্ষিত থাকবেন।
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এখন পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জ্যামাইকাতে তিনজন, হাইতিতে তিনজন এবং ডমিনিকান রিপাবলিকে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়াও, ডমিনিকান রিপাবলিকে একজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মেলিসা’র কেন্দ্রস্থলটি জ্যামাইকার কিংস্টন থেকে প্রায় ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং কিউবার গুয়ানতানামো থেকে ৫৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
ঝড়ের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৮০ কিলোমিটার।
জ্যামাইকার আবহাওয়া অফিসের প্রধান ইভান থম্পসন জানিয়েছেন, সবাই মিলে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন তারা। কিংস্টনের কাছে কর্মরত একটি সাহায্য সংস্থার উপদেষ্টা কলিন বোগল জানিয়েছেন, বন্যাপ্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও, অনেক পরিবার এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি।
তাদের মধ্যে ঘরবাড়ি ও জীবিকা হারানোর, আহত হওয়ার এবং বাস্তুচ্যুত হওয়ার গভীর ভয় কাজ করছে।
জ্যামাইকার পানি ও পরিবেশ মন্ত্রী ম্যাথিউ সামুদা জানিয়েছেন, ঝড়ের পরে ব্যবহারের জন্য তাদের কাছে ৫০টির বেশি জেনারেটর প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি জনগণকে জল সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ দুর্যোগ পরিস্থিতিতে পানির প্রতিটি ফোঁটা খুবই মূল্যবান।
এদিকে, কিউবার পূর্বাঞ্চলে মঙ্গলবার শেষ রাতের দিকে ‘মেলিসা’ আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিউবার গ্রানমা, সান্টিয়াগো দে কুবা, গুয়ানতানামো এবং হোলগুইন প্রদেশে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
এছাড়াও, লাস টিউনাস প্রদেশেও ঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
কিউবার পূর্বাঞ্চলে প্রায় ৫২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কিউবার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ওই অঞ্চলের ৬ লাখের বেশি মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি হাইতি ও ডমিনিকান রিপাবলিকের দক্ষিণাঞ্চলেও আঘাত হেনেছে। হাইতিতে এখনো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের সতর্কতা বহাল রয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, কিউবার পর ‘মেলিসা’ উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় বাহামাসের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে।
বাহামাসের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের এবং টার্কস ও কেইকোস দ্বীপপুঞ্জে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা বাড়ছে, যা আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
জ্যামাইকার এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
বাংলাদেশের মতো বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষকেও ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস