চীন-আসিয়ান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সম্প্রসারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সংরক্ষণবাদের বিকল্প?
আসিয়ান (ASEAN) দেশগুলোর সঙ্গে চীনের একটি বর্ধিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংরক্ষণবাদী নীতির বিকল্প হিসেবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের প্রস্তাব দিয়েছেন। মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এই চুক্তির প্রধান উদ্দেশ্য হলো চীন ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শুল্ক কমানো এবং বাণিজ্য বৃদ্ধি করা। এর ফলে দুই বিলিয়নের বেশি মানুষের একটি বিশাল বাজার তৈরি হবে। ডিজিটাল বাণিজ্য, সবুজ অর্থনীতি, টেকসই উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে (এসএমই) সহায়তা করার মতো নতুন ক্ষেত্রগুলোও এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বলেন, “অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠতে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা খুবই জরুরি। সংহতির পরিবর্তে সংঘাতের পথে যাওয়া কোনো লাভ বয়ে আনে না।” তিনি আরো উল্লেখ করেন, চীন ও আসিয়ান দেশগুলো ‘নিকট প্রতিবেশী ও ভালো ভাই’, যাদের মধ্যে ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ও মানসিক সম্পর্ক বিদ্যমান।
তবে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র চীনের সঙ্গে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বিরোধের কথা উল্লেখ করে এই চুক্তির বিষয়ে কিছুটা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “এই সহযোগিতা জবরদস্তির সঙ্গে চলতে পারে না।” যদিও তিনি এই বাণিজ্য চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
২০০২ সালে প্রথম স্বাক্ষরিত এই বাণিজ্য চুক্তি ২০১০ সাল থেকে কার্যকর হয়। এই চুক্তির ফলে দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ সালে যেখানে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৩৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে ২০২৩ সালে তা প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া এবং ব্রুনাইয়ের সঙ্গে দক্ষিণ চীন সাগরের কিছু অঞ্চলের মালিকানা নিয়ে চীনের বিরোধ রয়েছে। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট মার্কোস চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে সহযোগিতা ও অর্থপূর্ণ আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ফিলিপাইনের জাহাজ ও বিমান প্রায়ই ওই অঞ্চলে ‘বিপজ্জনক কার্যকলাপ ও হয়রানির’ শিকার হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বাণিজ্য চুক্তি উভয় পক্ষের জন্যই উপকারী হবে। বিশেষ করে সরবরাহ শৃঙ্খল এবং টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ গভীর হওয়ার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে, তা কমানো এখন জরুরি।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এই চুক্তির বিষয়ে বলেন, আসিয়ান সব দেশের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। তিনি আরও যোগ করেন, “আগে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলাম, আজ চীনের সঙ্গে। এটি আসিয়ান-এর কেন্দ্রীয় চরিত্রেরই প্রতিফলন।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস