জাঞ্জিবারের সমুদ্র উপকূল জুড়ে বেড়ে চলেছে শৈবালের চাষ, যা সেখানকার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ২৫ হাজার নারী, যাদের জীবনযাত্রা এবং আর্থিক অবস্থার ওপর এই চাষের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
খাদ্য, প্রসাধনী এবং ঔষধ শিল্পে শৈবালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই ব্যবসার প্রসার ঘটছে দ্রুত গতিতে। তবে এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে এক কঠিন বাস্তবতা।
উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের এই দ্বীপরাষ্ট্রে, নারীরা প্রায় দিনভর কোমর-সমান পানিতে দাঁড়িয়ে শৈবাল সংগ্রহ করেন। এই শ্রমসাধ্য কাজটি তাদের জন্য শারীরিক কষ্টের কারণ হয়।
পিঠের যন্ত্রণা, ত্বকের জ্বালা-পোড়া এবং সমুদ্রের অন্যান্য জীবজন্তুর কামড়ের মতো সমস্যা তো আছেই, সাথে রয়েছে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিও।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ছে, ফলে তাদের আরও গভীরে যেতে হচ্ছে শৈবাল সংগ্রহের জন্য, যা তাদের জন্য ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে।
জাঞ্জিবারের এই শৈবাল শিল্প সেখানকার অর্থনীতির তৃতীয় বৃহত্তম খাতে পরিণত হয়েছে, যা পর্যটন এবং মশলার ব্যবসার পরেই স্থান করে নিয়েছে।
স্থানীয় সরকার এটিকে “নীল অর্থনীতি (নীল অর্থনীতি)”-র অংশ হিসেবে দেখছে, যেখানে সমুদ্র এবং উপকূলীয় সম্পদের টেকসই ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিনিয়োগকারীরাও এই খাতে অর্থ বিনিয়োগ করছে, যার ফলে কর্মসংস্থান বাড়ছে এবং স্থানীয় নারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, “মওয়ানি জাঞ্জিবার” (Mwani Zanzibar) নামের একটি প্রতিষ্ঠান সেখানকার নারীদের প্রসাধনী তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তাদের উৎপাদিত “ফেস অ্যান্ড বডি স্কিন সুপারফুড” (ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য) নামের একটি পণ্য অনলাইনে ১৪০ ডলারে বিক্রি হয়, যা স্থানীয় বাজারে নারীদের আয় বাড়াতে সাহায্য করছে।
তবে, এই শিল্পের উন্নতির সাথে সাথে কিছু উদ্বেগের বিষয়ও রয়েছে। অধিকাংশ শৈবাল চাষী স্থানীয় মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করেন, ফলে তাদের লাভের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
যদিও নতুন বিনিয়োগ আসছে, কিন্তু এর সুফল সরাসরি চাষীদের কাছে পৌঁছানো নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
একজন চাষী, মওয়ানাঈশা মাকামে সিমাঈ (Mwanaisha Makame Simai), যিনি প্রতি মাসে প্রায় ৫০ ডলার আয় করেন, তিনি জানান, এই শিল্পের অর্জিত অর্থের সিংহভাগ যায় অফিসের কর্মীদের কাছে, কঠোর পরিশ্রম করা চাষীদের কাছে নয়।
এই প্রেক্ষাপটে, স্থানীয় নারীদের ক্ষমতায়ন এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য আরও বেশি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তাদের উৎপাদিত পণ্যের সরাসরি বাজারজাতকরণ এবং ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেতে পারে।
একই সাথে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবিলায় তাদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস