বাড়ির স্বপ্নে বিভোর? নিউইয়র্ক-ক্যালিফোর্নিয়ার লড়াইটি আপনার জন্য!

শিরোনাম: নিউ ইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়ার পথে ঢাকা? আবাসন সংকট সমাধানে জোনিং সংস্কারের চেষ্টা

গত কয়েক বছরে, বিশ্বের বিভিন্ন শহরে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে, আবাসনের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। একদিকে যেমন জনসংখ্যা বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে জমির দাম।

ফলে সাধারণ মানুষের জন্য একটি উপযুক্ত বাসস্থান তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই সমস্যা সমাধানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি প্রধান শহর – নিউ ইয়র্ক এবং ক্যালিফোর্নিয়া – জোনিং আইন সংস্কারের পথে হাঁটছে।

তাদের এই পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের জন্য কিছু শিক্ষা নিয়ে আসতে পারে।

নিউ ইয়র্ক সিটিতে, বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আলোচনা চলছে। বিষয়টা হলো, শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া বা প্রতিরোধের ক্ষমতা কার হাতে থাকবে।

সহজ কথায় বললে, যারা “আমার উঠোনে নয়” (NIMBY) মানসিকতা পোষণ করেন, তাদের ক্ষমতা কমানোর চেষ্টা চলছে।

NIMBY হলো এমন একটি ধারণা, যেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের এলাকার আশেপাশে নতুন আবাসন তৈরি করতে বাধা দেন। তারা মনে করেন, নতুন নির্মাণ তাদের এলাকার সুযোগ-সুবিধা, যেমন – স্কুল, রাস্তাঘাট, ইত্যাদির উপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং সম্পত্তির দাম কমিয়ে দেবে।

নিউ ইয়র্কের মেয়র এবং সিটি কাউন্সিলের মধ্যে এই ইস্যুতে মতভেদ দেখা দিয়েছে। মেয়র চান, দ্রুত আবাসন প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেওয়া হোক।

অন্যদিকে, সিটি কাউন্সিল মনে করে, স্থানীয় বাসিন্দাদের অধিকারকে খর্ব করা হচ্ছে। এই বিতর্কের মূল কারণ হলো, নিউ ইয়র্কের মত শহরগুলোতে জমির অভাব এবং উচ্চ মূল্যের কারণে আবাসন তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ম্যানহাটনের মতো এলাকায়, এখন একটি বাড়ির মাসিক ভাড়া প্রায় ৫,০০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ৫,৫০,০০০ বাংলাদেশি টাকা) পর্যন্ত পৌঁছেছে।

ক্যালিফোর্নিয়াতেও একই ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। সেখানেও আবাসন নির্মাণে বাধা সৃষ্টি করা হতো, যার ফলস্বরূপ ভাড়া আকাশ ছুঁয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়া সরকার সম্প্রতি পরিবেশ সংক্রান্ত কিছু পুরনো আইন শিথিল করেছে, যা আগে আবাসন প্রকল্প রুখতে স্থানীয় বাসিন্দাদের শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করত।

এছাড়াও, তারা রেল ও বাস স্টেশনের কাছাকাছি বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের একজন কাউন্সিলওম্যান আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এর ফলে লস অ্যাঞ্জেলেস “ম্যানহাটন”-এর মতো হয়ে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই রাজ্যগুলোতে একসময় স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের উপর বেশি জোর দেওয়া হতো। সত্তরের দশকে, ঐতিহাসিক এলাকা ধ্বংস করে রাস্তা তৈরির প্রতিবাদে এই নীতির জন্ম হয়েছিল।

কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, স্থানীয় পর্যায়ে কঠোর নিয়ম-কানুন আবাসন নির্মাণে বাধা সৃষ্টি করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু জোনিং আইন পরিবর্তন করলেই এই সমস্যার সমাধান হবে না।

নির্মাণ খরচ কমানো এবং সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন তৈরি করতে সরকারি ভর্তুকি প্রয়োজন। যেমন, নিউ ইয়র্কে নির্মাণ শ্রমিক ও নির্মাণ সামগ্রীর উচ্চ মূল্য একটি বড় সমস্যা।

একটি নতুন ভবন তৈরি করতে এর প্রায় ৬০ শতাংশ খরচ হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিজ্ঞতা থেকে, বাংলাদেশের শহরগুলোও শিক্ষা নিতে পারে।

ঢাকার মতো জনবহুল শহরে, জমির সংকট এবং উচ্চ মূল্যের কারণে আবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এখানকার সরকার ও নীতিনির্ধারকদেরও এই বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

আবাসন সংকট সমাধানে, জোনিং আইন সংস্কার এবং সরকারি সহায়তার সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

তবে, স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্বেগকে গুরুত্ব দিয়ে, সবার জন্য বাসযোগ্য শহর তৈরি করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *