১০০ বছর পর: বিস্ময়কর! বোতলে বন্দী সৈনিকের চিঠি!

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের চিঠি, যা এক বোতলে বন্দী ছিল, একশ বছরেরও বেশি সময় পর অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র সৈকতে খুঁজে পাওয়া গেছে। ঘটনাটি যেন সময়ের সীমা অতিক্রম করে আসা এক টুকরো স্মৃতি, যা আজও মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করে।

১৯১৬ সালের ১৫ই আগস্ট, দুই অস্ট্রেলীয় সৈনিক, প্রাইভেট ম্যালকম নেভিল ও প্রাইভেট উইলিয়াম হার্লে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রণাঙ্গনে যাওয়ার পথে তাদের জাহাজে বসে একটি বোতলে কিছু বার্তা লিখেছিলেন। তাদের যাত্রা ছিল ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে, যেখানে তারা ৪8 তম অস্ট্রেলীয় পদাতিক ব্যাটেলিয়নের সৈন্যদের সাথে যোগ দেবেন।

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার একটি সমুদ্র সৈকত, হোয়ার্টন বিচে, সম্প্রতি একটি পরিবারের সদস্যরা ওই বোতলটি খুঁজে পান। দেব ব্রাউন নামের এক নারী জানান, তারা নিয়মিত সমুদ্র সৈকত পরিষ্কার করতে যান, এবং সে সময়েই তাদের চোখে পরে বোতলটি। স্বচ্ছ কাঁচের বোতলের ভেতর ছিল সৈনিকদের হাতে লেখা চিঠি, যা পেন্সিল দিয়ে লেখা হয়েছিল।

চিঠিতে সৈনিকরা তাদের সমুদ্রযাত্রার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন। খাবার কেমন ছিল, তারা কোথায় ছিলেন – ‘সমুদ্রে’ অথবা ‘গ্রেট অস্ট্রেলিয়ান বাইট’-এর আশেপাশে – সে সব কথাও উল্লেখ ছিল। তাদের মধ্যে নেভিল তার মাকে লিখেছিলেন, তিনি বেশ ভালো সময় কাটাচ্ছেন। হার্লে লিখেছিলেন, যিনি বোতলটি খুঁজে পাবেন, তিনিও যেন তাদের মতোই ভালো থাকেন।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, যুদ্ধের এক বছর পর নেভিল নিহত হন। হার্লে বেঁচে ফিরলেও, যুদ্ধে গ্যাস আক্রমণের শিকার হওয়ায় পরবর্তীকালে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

বোতল খুঁজে পাওয়ার পর, দেব ব্রাউন দ্রুত সৈনিকদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন। হার্লের নাতনী, অ্যান টার্নার, এই খবরে “অবাক” হয়ে যান। তিনি বলেন, “আমরা এটা বিশ্বাস করতে পারছি না। এটা সত্যিই একটা অলৌকিক ঘটনা এবং আমাদের মনে হচ্ছে যেন আমাদের দাদা কবর থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন।” নেভিলের প্রপৌত্র, হার্বি নেভিল, এই আবিষ্কারকে “অবিশ্বাস্য” বলে বর্ণনা করেছেন।

এই ঘটনার মাধ্যমে, দুটি পরিবারের সদস্যরা তাদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে নতুন করে জানতে পেরেছেন। এটি তাদের পারিবারিক ইতিহাসের একটি মূল্যবান অংশ হয়ে উঠেছে, যা তাদের মধ্যে গভীর আবেগ সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা ও সৈনিকদের আত্মত্যাগের গল্প আজও মানুষকে নাড়া দেয়, আর এই বোতলবন্দী চিঠি যেন সেই ইতিহাসেরই জীবন্ত সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *