যুক্তরাষ্ট্রে এক মর্মান্তিক ঘটনায়, ৬ বছর বয়সী এক ছাত্রের গুলিতে গুরুতর আহত শিক্ষিকার ঘটনায় প্রাক্তন সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৪০ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৪৪০ কোটি টাকার বেশি) ক্ষতিপূরণের মামলা চলছে। শিক্ষক অ্যাবি জর্নারের ওপর হামলার ঘটনায় কর্মকর্তাদের গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়েছে, যা বর্তমানে দেশটির বিচার ব্যবস্থায় এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে, ভার্জিনিয়ার নিউপোর্ট নিউজ শহরের রিচনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটে এই ভয়ঙ্কর ঘটনা। ক্লাসরুমের ভেতরেই গুলিবিদ্ধ হন শিক্ষিকা অ্যাবি জর্নার।
অভিযোগ উঠেছে, ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে ওই ছাত্রের কাছে বন্দুক থাকার বিষয়ে সতর্ক করা হলেও, স্কুলের তৎকালীন সহকারী প্রধান শিক্ষিকা ইবনি পার্কার কোনো পদক্ষেপ নেননি। এই মামলায় পার্কারের বিরুদ্ধে গুরুতর শিশু অবহেলার অভিযোগও আনা হয়েছে।
আদালতে দেওয়া জর্নারের সহোদরা হ্যানা জর্নারের সাক্ষ্য অনুযায়ী, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর অ্যাবি আগের মতো আর নেই। তাঁর জীবন সম্পূর্ণ বদলে গেছে।
একসময় প্রাণোচ্ছল থাকা বোন, এখন যেন সব কিছু থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। মামলার শুনানিতে, জর্নারের ওপর হওয়া আঘাতের ভয়াবহতা এবং তাঁর অস্ত্রোপচারের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুলিটি তাঁর ফুসফুসে আঘাত হানে এবং তা বুকের খুব কাছ দিয়ে যাওয়ায় জীবনহানির ঝুঁকি ছিল। হাতে গুরুতর জখম হওয়ায়, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন কিনা, তা এখনো অনিশ্চিত।
মামলার অভিযোগনামায় বলা হয়েছে, ঘটনার আগে কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী, ওই ছাত্রের কাছে বন্দুক থাকার বিষয়টি পার্কারকে জানান। এমনকি, ওই ছাত্র তার ব্যাগ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র সদৃশ একটি বস্তু বের করে দেখালে, শিক্ষিকারা তাকে তল্লাশি করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু পার্কার নাকি তাঁদের বাধা দেন এবং জানান, ছাত্রটিকে শীঘ্রই তার মা নিতে আসবেন। এছাড়া, জর্নারও পার্কারকে জানিয়েছিলেন যে, ওই ছাত্রের আচরণে সহিংসতার প্রবণতা রয়েছে।
আদালতে উপস্থাপিত নথিতে আরও জানা যায়, ছাত্রটির আগের বছরেও সহপাঠীদের সঙ্গে মারামারি এবং এক শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এমনকি, ঘটনার দিন ওই ছাত্রকে বিদ্যালয়ে একাই থাকতে দেওয়া হয়, যদিও আগে সহিংস আচরণের কারণে তার সঙ্গে অভিভাবক থাকার কথা ছিল।
ঐতিহাসিক এই মামলার শুনানিতে, আদালতের বাইরে প্রাক্তন সহকারী প্রধান শিক্ষিকা ইবনি পার্কারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। ঘটনার পর পার্কার পদত্যাগ করেন এবং বিদ্যালয়ের প্রধানকে অন্য স্কুলে বদলি করা হয়।
এই ঘটনায় স্কুল বোর্ড সুপারিনটেন্ডেন্টকে অপসারণ করে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মামলার রায় ভবিষ্যতে স্কুলগুলোতে নিরাপত্তা বিষয়ক নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমেরিকার স্কুলগুলোতে বন্দুক সহিংসতার ঘটনার প্রেক্ষাপটে, কর্মকর্তাদের গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণ হলে, এটি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড্যারিল কে ব্রাউন এই মামলার সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে বলেছেন, এই ধরনের মামলা প্রমাণ করতে পারলে, ভবিষ্যতে স্কুলগুলোতে অস্ত্র এবং শিশুদের নিরাপত্তা বিষয়ক নীতি আরও কঠোর হতে পারে।
এদিকে, অভিযুক্ত ছাত্রীর মা-কে সন্তানের প্রতি অবহেলার অভিযোগে প্রায় চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ছাত্রের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন