চিনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে বিরল মৃত্তিকা: আসল কারণ জানেন?

চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখন বিরল মৃত্তিকা ধাতু (Rare Earth Minerals)। এই মূল্যবান খনিজ পদার্থগুলি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি, চীন এই বিষয়ে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

বিরল মৃত্তিকা ধাতু কী, এর ব্যবহার এবং এই খনিজগুলির উপর চীনের একচেটিয়া আধিপত্যের কারণে কিভাবে এটি বাণিজ্য যুদ্ধে প্রভাব ফেলছে, তা নিয়েই আজকের আলোচনা।

আসলে, বিরল মৃত্তিকা ধাতু কোনো একটি বিশেষ মৌল নয়। এইগুলি হলো ১৭টি মৌলিক ধাতুর একটি গ্রুপ, যার মধ্যে স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম এবং ল্যান্থানাইড অন্যতম। যদিও এদের ‘বিরল’ বলা হয়, তবে এই ধাতুগুলি পৃথিবীর ভূত্বকে যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান।

সোনার চেয়েও এদের প্রাচুর্য বেশি, তবে উত্তোলন এবং প্রক্রিয়াকরণ বেশ কঠিন ও ব্যয়বহুল। এছাড়াও, পরিবেশের উপরও এদের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে।

স্মার্টফোন থেকে শুরু করে উইন্ড টার্বাইন, এলইডি লাইট, ফ্ল্যাট স্ক্রিন টিভি—দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রযুক্তিতে বিরল মৃত্তিকা ধাতুর ব্যবহার অপরিহার্য। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, এমআরআই স্ক্যানার এবং ক্যান্সারের চিকিৎসাতেও এর গুরুত্ব অপরিসীম।

এমনকি, মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্যেও এই ধাতুগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং স্যাটেলাইটের মতো অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম তৈরিতেও এটি ব্যবহার করা হয়।

আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার (International Energy Agency) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে উত্তোলিত বিরল মৃত্তিকা ধাতুর ৬১ শতাংশ আসে চীন থেকে। প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রেও চীনের একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে, যা বিশ্ব বাজারের ৯২ শতাংশ।

এই ধাতুগুলি প্রধানত দুই প্রকারের: হালকা ও ভারী। ভারী বিরল মৃত্তিকা ধাতুগুলি তুলনামূলকভাবে কম পাওয়া যায়। বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্র ভারী ধাতুগুলি আলাদা করার প্রযুক্তিগত দক্ষতা রাখে না।

আগে তারা এই ধাতুগুলি প্রক্রিয়াকরণের জন্য চীনের উপর নির্ভরশীল ছিল।

চীন দীর্ঘদিন ধরে বিরল মৃত্তিকা ধাতুগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তাদের শিল্পনীতিকে শক্তিশালী করেছে। বাণিজ্য যুদ্ধে এটি তাদের অন্যতম হাতিয়ার।

সম্প্রতি, চীন এই ধাতুগুলির রপ্তানির উপর নতুন করে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যার ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়েছে। এই পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনের এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে। কারণ, বিরল মৃত্তিকা ধাতুর জন্য তারা চীনের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরল মৃত্তিকা যৌগ এবং ধাতুর ৭০ শতাংশই চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই পরিস্থিতিতে, উভয় দেশকেই তাদের কৌশল নতুন করে সাজাতে হবে। বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব শুধু এই দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বিশ্ব অর্থনীতিতেও এর গভীর প্রভাব পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলির উপরও কিছু প্রভাব পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি বিরল মৃত্তিকা ধাতুর দাম বা সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন এবং প্রযুক্তি খাতের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

কারণ, এই ধাতুগুলি বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য।

বর্তমানে, উভয় দেশই বাণিজ্য চুক্তি পুনরায় আলোচনা করার চেষ্টা করছে। তবে, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, এই ধরনের চুক্তি বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

ভবিষ্যতে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।

তথ্যসূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *