নিষেধাজ্ঞার আগুনে: তেলের ব্যবসা ছাড়তে বাধ্য হলো রাশিয়ার লুকoil!

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কোপে আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে রাশিয়ার তেল কোম্পানি লুকোইল। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার উপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলস্বরূপ, রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল কোম্পানি লুকোইল তাদের আন্তর্জাতিক ব্যবসা, বিশেষ করে বিদেশি সম্পদ বিক্রি করতে রাজি হয়েছে।

এই ঘটনা আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের ব্যবসা এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলছে।

জানা গেছে, লুকোইলের আন্তর্জাতিক ব্যবসার দেখাশোনা করা ‘লুকোইল ইন্টারন্যাশনাল জিএমবিএইচ’-কে কেনার প্রস্তাব দিয়েছে গ্লোবাল কমোডিটি ট্রেডার গানভোর। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরই এই পদক্ষেপ নেয় লুকোইল কর্তৃপক্ষ।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, লুকোইল অন্য কোনো সম্ভাব্য ক্রেতার সঙ্গে আলোচনা করতে পারবে না। যদিও এখনো মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এই চুক্তি।

গানভোরের উত্থান হয় ২০০০ দশকে, যখন তারা রাশিয়ার তেলের বৃহত্তম ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কোম্পানিটির সঙ্গে একসময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী গেన్నాডি টিমচেনকোরও সম্পর্ক ছিল।

২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর যুক্তরাষ্ট্র টিমচেনকোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তিনি গানভোর থেকে তার অংশীদারিত্ব বিক্রি করে দেন।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর তেল ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় গানভোরের মতো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক লাভ করেছে। সেই লাভের অর্থ ব্যবহার করে তারা এখন বিভিন্ন সম্পদ কিনছে, যার মধ্যে রয়েছে পরিশোধনাগার, তেলক্ষেত্র, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প।

লুকোইলের বিদেশি সম্পদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইরাকের ওয়েস্ট কুর্না-২ তেলক্ষেত্র। এই খনিটির ৭৫ শতাংশের মালিকানা লুকোইলের।

এছাড়াও বুলগেরিয়ার বৃহত্তম পরিশোধনাগার লুকোইল নেফতোহিম বুর্গাস এবং রোমানিয়ার পেট্রোটেল তেল পরিশোধনাগারের মালিকানাও তাদের হাতে।

লুকোইল হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া এবং তুরস্কের স্টার পরিশোধনাগারে তেল সরবরাহ করে। তুরস্কের স্টার পরিশোধনাগারটি আজারবাইজানের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি সোকারের মালিকানাধীন এবং এটি মূলত রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের উপর নির্ভরশীল।

ইউরোপে লুকোইলের তেল টার্মিনাল এবং খুচরা জ্বালানি শৃঙ্খলেও অংশীদারিত্ব রয়েছে। মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকাতেও তাদের বিভিন্ন প্রকল্প চলমান রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চুক্তির ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দামে পরিবর্তন আসতে পারে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়েও নতুন করে আলোচনা শুরু হতে পারে।

কারণ, রাশিয়ার উপর পশ্চিমা দেশগুলোর এই নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের মতো তেল-নির্ভর দেশগুলোর জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *