ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গলে বনভূমি ধ্বংসের পরিমাণ কিছুটা কমলেও, একই সময়ে ভয়াবহভাবে বেড়েছে দাবানলের দাপট। সম্প্রতি প্রকাশিত সরকারি তথ্যে জানা গেছে, ২০২৪ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০২৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সময়ে আমাজন রেইনফরেস্টে বনভূমি ধ্বংসের পরিমাণ ১১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
তবে, একই সময়ে দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (INPE)-এর হিসাব অনুযায়ী, দাবানলের ঘটনা রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে।
ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, গত এক বছরে প্রায় ৫,৭৯৬ বর্গকিলোমিটার বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। যদিও এই পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় কম, যা নিউইয়র্ক শহরের আয়তনের প্রায় চার গুণ, তবুও উদ্বেগের কারণ হলো দাবানলের ব্যাপকতা।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বনভূমি ধ্বংসের পরিমাণ কমানোর ক্ষেত্রে পরিবেশগত বিধিনিষেধের কড়াকড়ি, স্যাটেলাইট-এর মাধ্যমে নজরদারি বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের ফলে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ব্রাজিলের আমাজন অঞ্চলের বেলেমে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন, কপ-৩০। এই শীর্ষ সম্মেলনে ২০৩০ সালের মধ্যে অবৈধভাবে বনভূমি ধ্বংস বন্ধ করার লক্ষ্য পূরণে দেশটির ওপর চাপ থাকবে।
তবে, একদিকে যখন বনভূমি ধ্বংস কমছে, ঠিক তখনই দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। ইনপের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে আমাজনে দাবানলের ঘটনা ২০১০ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ব্যাপক হারে আগুন লাগার কারণে উত্তর ব্রাজিলের কিছু অংশে ঘন ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে এবং আমাজোনাস ও পারা-র মতো রাজ্যগুলোতে স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরই মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাওয়া জমি পরিষ্কার করার জন্য প্রায়ই আগুন ব্যবহার করা হয়, যা বনভূমি রক্ষার সাম্প্রতিক প্রচেষ্টাগুলোকে দুর্বল করে দিতে পারে।
ব্রাজিলের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা, ইবামা জানিয়েছে, তারা এ বছর ৯,৫৪0 টি পরিদর্শন করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি। এছাড়া, পরিবেশগত বিধি লঙ্ঘনের জন্য তারা ২৮৫ কোটি রিয়েল (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০০ কোটি টাকা) জরিমানা করেছে এবং অবৈধভাবে বনভূমি ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত ৪,৫০০-এর বেশি যন্ত্রপাতি ও গবাদি পশু জব্দ করেছে।
কর্মকর্তাদের মতে, বনভূমি ধ্বংস এবং অবৈধভাবে আগুন লাগানোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইবামা ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় যৌথভাবে ৭৫টির বেশি দেওয়ানি মামলা দায়ের করেছে।
ক্লাইমেট অবজারভেটরি নামক একটি জোটের নির্বাহী সচিব মার্সিও আস্টরিনি সংবাদ সংস্থা এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত ব্রাজিলের জলবায়ু নীতির ভালো এবং খারাপ উভয় দিকই তুলে ধরে।
তিনি বলেন, “এটা খুবই ভালো খবর যে, সরকার এবং সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বনভূমি ধ্বংসের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। তবে একইসঙ্গে, এটি সরকারের স্ববিরোধিতাও প্রকাশ করে। একদিকে যখন বনভূমি ধ্বংস কমানোর মতো সমাধান দেওয়া হচ্ছে, তখন আবার আমাজন নদীর অববাহিকায় তেল উত্তোলনের প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।”
গ্রিনপিস ব্রাজিল জানিয়েছে, ফলাফল ইতিবাচক হলেও টেকসই অগ্রগতির জন্য স্থায়ী সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
গ্রিনপিসের ‘জিরো ডিফ্রস্টেশন’ ক্যাম্পেইনের মুখপাত্র আনা ক্লিস ফেরেইরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ফলাফল উৎসাহজনক, তবে উন্নতির সুযোগ এখনো রয়েছে। এমন সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা জরুরি যা রাজনৈতিক চক্রের ওপর নির্ভরশীল নয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে শক্তিশালী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।
 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
				
			 
				
			 
				
			 
				
			