ইন্দো-প্যাসিফিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের ঘোষণা!

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা, ভারতের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী শুক্রবার মালয়েশিয়ায় চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে আলোচনা হলেও, তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে মতপার্থক্য এখনো বিদ্যমান।

একই দিনে, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা এই অঞ্চলে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার করবে।

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, চীনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে আলোচনা করেন।

তিনি চীনের প্রতি তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের কার্যক্রমের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জবাবে, চীনের পক্ষ থেকে তাইওয়ানকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়।

বৈঠকের পর, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এক বিবৃতিতে জানান, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে চায় এবং তাদের স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত রয়েছে।

অন্যদিকে, চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য কাজ করতে আগ্রহী।

এই বৈঠকের আগে, গত সেপ্টেম্বরে দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মধ্যে একটি ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশের মধ্যেকার কৌশলগত মতপার্থক্য সত্ত্বেও, উত্তেজনা কমাতে এই ধরনের আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ।

একই দিনে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়ে দুই দেশের মধ্যেকার প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও বাড়ানোর জন্য একটি ১০ বছর মেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

এই চুক্তির মাধ্যমে সামরিক এবং প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, যা চীনকে মোকাবিলায় সহায়ক হবে বলে মনে করা হয়।

আলোচনায়, উভয়পক্ষ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি অবাধ, উন্মুক্ত এবং নিয়ম-ভিত্তিক পরিবেশ বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে।

এই চুক্তিকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এদিকে, মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী দক্ষিণ চীন সাগরে বিদেশি কোস্টগার্ড জাহাজের মাধ্যমে চালানো কিছু কার্যক্রমের সমালোচনা করেন।

তিনি এটিকে সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন। যদিও তিনি সরাসরি চীনের কথা উল্লেখ করেননি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি চীনের কার্যক্রমের প্রতি ইঙ্গিত ছিল।

দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিদ্যমান বিরোধ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলে সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানো অপরিহার্য।

উল্লেখ্য, চীন এই সমুদ্রের প্রায় পুরো এলাকার ওপর নিজেদের মালিকানা দাবি করে, যা ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ আরো কয়েকটি দেশের সঙ্গে বিরোধের মূল কারণ।

আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে দেশগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।

বিশেষ করে সাইবার হামলা এবং দক্ষিণ চীন সাগরের মতো বিষয়গুলো মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *