ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি: মিত্র দেশগুলোর জন্য এক কঠিন পরিস্থিতি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আলোচনায় তাঁর কৌশল হিসেবে শুল্ক আরোপকে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। প্রায়ই দেখা গেছে, বাণিজ্য সম্পর্কিত বিষয় ছাড়াও অন্যান্য কারণেও তিনি শুল্ক বৃদ্ধি করেছেন।
সম্প্রতি কানাডার ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত এর প্রমাণ। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, অন্টারিও প্রদেশে প্রচারিত একটি বিজ্ঞাপন, যেখানে শুল্কবিরোধী অবস্থানের কথা বলা হয়েছে।
বিষয়টি সম্ভবত অনেকের কাছেই পরিষ্কার যে, অন্টারিও প্রদেশের পদক্ষেপের সঙ্গে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তে অনেকেই বিস্মিত হননি।
এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
কানাডার ঘটনাটি স্পষ্ট করে দেয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় বসা দেশগুলোর জন্য পরিস্থিতি কতটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথমত, তাদের দর কষাকষির মানসিকতা নিয়ে ওয়াশিংটনে আসতে হয়, যেখানে তারা সবসময় কিছু দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে।
দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর জন্য শেষ মুহূর্তে তাদের আরও কিছু দেওয়ার মতো থাকতে হয়।
এখানেই শেষ নয়, অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কারণ ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করে বসে।
এর অর্থ হলো, কোনো দেশই জানে না, কখন, কোন সিদ্ধান্তের কারণে ট্রাম্প রুষ্ট হবেন এবং শুল্কের খড়গ নেমে আসবে।
ঐতিহ্যগতভাবে, শুল্ক আরোপ করা হতো বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং অভ্যন্তরীণ বাজারকে সুরক্ষার জন্য। কিন্তু ট্রাম্পের এই নীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এমনকি কোনো বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পরও তিনি যে কোনো সময় একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন, এমনটাই মনে হয়।
কিছু ক্ষেত্রে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পেছনে রাজনৈতিক বা ভূ-রাজনৈতিক যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন, রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
একে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বৃহত্তর কৌশল হিসেবে অনেকে দেখছেন।
আবার অনেক ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপের কারণ খুঁজে পাওয়া কঠিন। উদাহরণস্বরূপ, ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে অভিযুক্ত করার কারণে ট্রাম্প ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।
তিনি এই বিচারকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এর ফলে ব্রাজিলের কফি রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দেশটির অর্থনীতিতে মন্দা আসার পূর্বাভাস দিয়েছে।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো যুক্তরাষ্ট্রের মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে ট্রাম্পের সমালোচনা করলে, ট্রাম্প পেত্রোকে ‘অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং দেশটির ওপর বিদেশি সহায়তা বন্ধ করে দেন ও শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দেন।
এমনকি শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার ‘অন্যায় আচরণের’ কারণেও ট্রাম্প দেশটির ওপর শুল্ক আরোপ করেন।
অতীতে দেখা গেছে, চীনই একমাত্র দেশ, যারা ট্রাম্পের এই নীতির বিরুদ্ধে সফলভাবে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে। শি জিনপিং অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ট্রাম্পকে জয়ী দেখালেও, নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছেন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে চীন শুল্ক হ্রাসেও সক্ষম হয়েছে।
তবে, একটি বিষয় এখনো পরিষ্কার নয়। সেটি হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ক্ষমতা নিয়ে একটি মামলার শুনানি করতে যাচ্ছে।
যদি আদালত ট্রাম্পের এই ক্ষমতাকে অবৈধ ঘোষণা করে, তাহলে তাঁর এই হাতিয়ার দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন