এফবিআইয়ের ‘সন্ত্রাসী হামলা’ ভেস্তে দেওয়ার দাবি, ডিয়ারবর্নের মানুষের মনে প্রশ্ন?

মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডিয়ারবোর্নে ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) একটি সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা বানচাল করার দাবি জানালেও, সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে সন্দেহ। হ্যালোইন উৎসবের প্রাক্কালে, এফবিআই কর্মকর্তাদের অভিযানে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়।

তবে, এই ঘটনার পর সেখানকার মুসলিম-অধ্যুষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

ডিয়ারবোর্ন শহরটি ‘আরব আমেরিকার কেন্দ্র’ হিসেবে পরিচিত। এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আরব-আমেরিকান বসবাস করেন।

এফবিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা একটি সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করেছে এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল এক্সে (সাবেক টুইটার) এই বিষয়ে একটি বিবৃতি দেন।

যদিও আটকদের নাম প্রকাশ করা হয়নি, তবে স্থানীয় বাসিন্দারা এবং আটকদের আইনজীবীরা এফবিআইয়ের এই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

স্থানীয়দের মতে, ডিয়ারবোর্ন একটি শান্তিপূর্ণ শহর, যেখানে সবাই মিলেমিশে বসবাস করে। সেখানকার বাসিন্দারা একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল।

তারা এফবিআইয়ের দেওয়া তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দিহান। তাদের মতে, কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করা এবং আটকদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন না করাটা উদ্বেগের বিষয়।

আটকদের এক আইনজীবী জানিয়েছেন, “আমরা নিশ্চিত যে, ঘটনার নিরপেক্ষ পর্যালোচনার পর এটা স্পষ্ট হবে যে কোনো ‘গণ-মৃত্যু’ ঘটানোর পরিকল্পনা বা সমন্বিত সন্ত্রাসী চক্রান্ত ছিল না।”

এফবিআইয়ের পক্ষ থেকে ঘটনার বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

তবে সূত্রের খবর অনুযায়ী, “কুমড়ো দিবস” (pumpkin day) নিয়ে অনলাইনে কিছু আলোচনা এবং একটি শুটিং রেঞ্জে অস্ত্র প্রশিক্ষণের বিষয় উঠে এসেছে।

আইনজীবীদের মতে, “কুমড়ো দিবস” নিয়ে আলোচনা সম্ভবত একটি অনলাইন গেমিং গ্রুপের কথোপকথন ছিল, যা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

এই ঘটনার পর স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর মুসলিম-আমেরিকানদের ওপর যে ধরনের সন্দেহ ও নজরদারি চালানো হয়েছিল, এই ঘটনা যেন সেই স্মৃতিকেই ফিরিয়ে এনেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই ধরনের অভিযোগ তাদের সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ। এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য আসতে শুরু করেছে, যা সেখানকার মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি করেছে।

ডিয়ারবোর্নের মেয়র আব্দুল্লাহ হাম্মুদ, যিনি নিজেও লেবাননের অভিবাসী পরিবারের সন্তান, এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, “আমাদের সম্প্রদায়কে দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে, যা আর কাম্য নয়।”

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনার তদন্ত এখনো চলছে এবং বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *