স্বাস্থ্য বিষয়ক এক নতুন গবেষণায় জানা গেছে, শিশুদের বাদাম এলার্জি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আগে যে ধারণা প্রচলিত ছিল, সেটি ভুল ছিল। বিজ্ঞানীদের দীর্ঘ গবেষণার ফলস্বরূপ এখন জানা গেছে, শৈশবে শিশুদের বাদাম খাওয়ানো হলে তাদের মধ্যে এলার্জির প্রবণতা কমে যায়।
এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বিষয়টি আরও ভালোভাবে বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে কয়েক দশক আগে।
ডাক্তার গাইডন ল্যাক নামের একজন চিকিৎসক তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে শিশুদের বাদাম এলার্জি নিয়ে কাজ শুরু করেন। সেই সময় ধারণা ছিল, শিশুদের বাদাম জাতীয় খাবার থেকে দূরে রাখলে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
কিন্তু ল্যাক সাহেব তাঁর গবেষণায় ভিন্ন চিত্র দেখতে পান। তিনি লক্ষ্য করেন, ইসরায়েলের শিশুদের মধ্যে বাদাম এলার্জির প্রবণতা খুবই কম, যেখানে যুক্তরাজ্যের শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি।
এই দুটি অঞ্চলের শিশুদের খাদ্যাভ্যাস পর্যবেক্ষণ করে ল্যাক সাহেব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খুঁজে পান। ইসরায়েলের শিশুরা শৈশবকালে নিয়মিত বাদাম জাতীয় খাবার, বিশেষ করে ‘বাম্বা’ নামক একটি স্ন্যাকস, গ্রহণ করে।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের শিশুদের খাদ্য তালিকায় বাদাম তেমন একটা ছিল না। ল্যাক সাহেবের মনে হয়, সম্ভবত শিশুদের মধ্যে এলার্জি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এই খাদ্যাভ্যাস একটি বড় ভূমিকা রাখে।
এই ধারণা সত্যি কিনা, তা প্রমাণ করার জন্য ল্যাক সাহেব ও তাঁর দল একটি গবেষণা শুরু করেন। তাঁরা ইসরায়েল ও যুক্তরাজ্যের প্রায় ১০ হাজার শিশুর ওপর গবেষণা চালান।
গবেষণায় দেখা যায়, যে শিশুরা শৈশবে বাদাম খেয়েছে, তাদের মধ্যে এলার্জি হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম ছিল। এই গবেষণার ফল পরবর্তীতে ‘দ্য ল্যাপ’ (LEAP) স্টাডি নামে পরিচিত হয়।
২০১৫ সালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা যায়, শৈশবে বাদাম খাওয়ানো শিশুদের মধ্যে বাদাম এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই আবিষ্কার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে আসে। আগে শিশুদের বাদাম থেকে দূরে রাখার যে পরামর্শ দেওয়া হতো, তা এখন বদলে গেছে।
বর্তমানে চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুদের জীবনের প্রথম বছরগুলোতে, বিশেষ করে ৪ থেকে ১১ মাস বয়সের মধ্যে, বাদাম জাতীয় খাবার দেওয়া উচিত। তবে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এটি করতে হবে।
বর্তমানে ডাক্তার ল্যাক আরও একটি গবেষণা পরিচালনা করছেন, যার নাম ‘সিল’ (SEAL) স্টাডি। এই গবেষণায় শিশুদের একজিমা বা চামড়ার সমস্যা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, শিশুদের ত্বকের এই সমস্যা যদি শৈশবে চিকিৎসা করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে তাদের খাদ্য এলার্জি হওয়ার ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই অগ্রযাত্রা প্রমাণ করে, গবেষণা ও বিজ্ঞান আমাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক ধারণাগুলোকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও উন্নত করতে পারে। মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিজ্ঞান সবসময় নতুন পথ দেখায়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন