ট্রাম্পের নাইজেরিয়া আক্রমণের হুমকি: আসল সত্য ফাঁস!

নাইজেরিয়ায় অস্থিরতা: ট্রাম্পের সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত নিয়ে উদ্বেগে দেশটির সাধারণ মানুষ। তিনি অভিযোগ করেছেন, ইসলামপন্থী জঙ্গিদের হাতে সেখানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপর ব্যাপক গণহত্যা চলছে।

তবে পরিস্থিতি এত সরল নয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চলছে। বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলায় যেমন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ নিহত হয়েছেন, তেমনই মুসলিমরাও শিকার হয়েছেন সহিংসতার।

দেশটির দুই প্রধান ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠী—খ্রিস্টান ও মুসলিম—উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শুধু ধর্ম নয়, ভূমি ও জলের অধিকার নিয়ে কৃষক ও রাখালদের মধ্যে বিদ্যমান বিরোধও অনেক সময় সহিংসতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

নাইজেরিয়ার সরকার ট্রাম্পের এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তারা বলছে, খ্রিস্টানদের নিরাপত্তা দিতে সরকার যথেষ্ট চেষ্টা করছে।

নাইজেরিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত তাদের বিস্মিত করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন পদক্ষেপের পরিকল্পনা নাইজেরিয়ার সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখাচ্ছে না।

এমনকি, খ্রিস্টানদের হত্যা বন্ধ করতে ব্যর্থ হলে নাইজেরিয়ার প্রতি মার্কিন সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।

তবে, নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের উপর সত্যিই কি ব্যাপকহারে নির্যাতন চলছে?

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটির উত্তরাঞ্চলে জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলায় খ্রিস্টানদের হত্যার ঘটনা ঘটলেও, গত দুই বছরে এই সংখ্যা কিছুটা কমেছে।

স্থানীয় এক ধর্মযাজক জানান, উত্তরাঞ্চলে খ্রিস্টানদের উপর ‘পরিকল্পিতভাবে’ হামলার শিকার হওয়ার বিষয়টি তিনি সমর্থন করেন। তবে একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেন, বর্তমানে হত্যার সংখ্যা কমে এসেছে।

অন্যদিকে, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, শুধু খ্রিস্টান নয়, মুসলিমরাও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলার শিকার হচ্ছেন। এমনকি, বাজারের মতো জনবহুল স্থানগুলোতে চালানো হামলায় মুসলিমরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে নাইজেরিয়ায় বিভিন্ন হামলায় ২০,৪০০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নিহত হয়েছেন ৩১৭ জন, আর মুসলিম নিহত হয়েছেন ৪১৭ জন।

তবে নিহতদের মধ্যে অধিকাংশের ধর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই ধরনের মন্তব্য নাইজেরিয়ার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। কারণ, এর ফলে জঙ্গিবাদ ছড়ানোর সম্ভাবনা বাড়ে এবং স্থানীয় পর্যায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

নাইজেরিয়ার বিরোধী দলের একজন মুখপাত্রের মতে, দেশটির সরকার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলেও, এমন কোনো প্রমাণ নেই যে খ্রিস্টানদের বিশেষভাবে হত্যা করা হচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, দেশটি ধর্মীয় স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘন করছে।

বিশ্লেষকদের মতে, নাইজেরিয়ায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ সেখানকার বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করবে না। বরং, এটি পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে।

তাঁরা নাইজেরিয়া সরকারকে সব সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে এবং জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও ভূমি বিরোধের মতো মূল সমস্যাগুলো সমাধানে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *