চরম দুর্ভোগ! অচলাবস্থার ৩৫ দিনে জনজীবনে কি প্রভাব?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি অচলাবস্থা: লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, রাজনৈতিক অচলাবস্থা অব্যাহত।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম দীর্ঘ সময় ধরে চলা সরকারি অচলাবস্থা দেশটির অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশটির বিভিন্ন খাতে দেখা দিয়েছে চরম সংকট। এই অচলাবস্থা বর্তমানে ৩৫ দিনে পৌঁছেছে, যা অতীতের একটি রেকর্ডকে ছুঁয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে, দেশটির এক মিলিয়নের বেশি সরকারি কর্মচারী বেতন পাচ্ছেন না, যা তাদের জীবনযাত্রায় গভীর সংকট তৈরি করেছে।

এই অচলাবস্থার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন।

খাদ্য সহায়তা প্রকল্প, যেমন—সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম (SNAP) এর সুবিধাভোগীরা তাদের প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এর ফলে খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে এবং দরিদ্র পরিবারগুলো কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে।

এছাড়া, সরকার ফেডারেল কর্মীদের বেতন দিতে না পারায় অনেক জরুরি বিভাগের কর্মীরাও কাজ চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন।

যদিও কিছু বিভাগে কর্মীদের কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে, কিন্তু তাদের বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আর্থিক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

শুধু সরকারি কর্মচারীরাই নন, এই অচলাবস্থার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বেসরকারি খাতের কর্মীরাও।

অনেক ঠিকাদার, যারা ফেডারেল সরকারের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেন, তারাও বেতন পাচ্ছেন না।

উদাহরণস্বরূপ, স্মিথসোনিয়ান-এর পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বেতনহীন অবস্থায় কাজ করছেন।

এছাড়াও, ছোট ব্যবসার জন্য সরকারি ঋণ অনুমোদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বিশাল।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই অচলাবস্থার কারণে দেশটির অর্থনীতিতে ৭ থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হতে পারে।

সরকারি ব্যয়ের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আটকে যাওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে।

এর ফলে, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজও ব্যাহত হচ্ছে।

স্বাস্থ্যখাতেও দেখা দিয়েছে জটিলতা।

রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC) এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থাগুলো ডেটা সংগ্রহ ও আপডেটের কাজ করতে পারছে না।

এর ফলে, ফ্লু, কোভিড-১৯ এবং আরএসভি-র মতো রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হচ্ছে।

তাছাড়া, স্বাস্থ্য বীমা সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এই অচলাবস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশে নাগরিক জীবনেও নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

জাতীয় উদ্যানগুলোতে কর্মীদের অভাবে ভ্রমণকারীরা বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।

অনেক রাজ্যে বিবাহ সনদপত্র প্রদান ও বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

এছাড়া, শেয়ার বাজার এবং নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রেও জটিলতা তৈরি হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিভাজনকে আরও গভীর করেছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার অভাবে অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হচ্ছে, যা দেশটির অর্থনীতি ও জনগণের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *