যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যের জেরে আবারও আলোচনায় মূল্যবৃদ্ধি এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। ট্রাম্প যদিও বলছেন যে, মূল্যস্ফীতি এখন আর নেই এবং খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে, তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এমন দাবি বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
এর আগে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও একই ধরনের ভুল করেছিলেন, যা তার রাজনৈতিক জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ট্রাম্প সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমাদের এখানে কোনো মূল্যস্ফীতি নেই। বরং, আমাদের মুদি দোকানের জিনিসপত্রের দাম কমেছে।” তবে সরকারি পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা।
দেশটির ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিস্টিক্স (Bureau of Labor Statistics) -এর হিসাব অনুযায়ী, ট্রাম্পের মেয়াদে মুদি দোকানের জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে প্রায় ১.৪ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যবৃদ্ধির এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করা আমেরিকার সাধারণ মানুষের কাছে খুব কঠিন একটি বিষয়। কারণ, বাজারে গেলেই তারা জিনিসপত্রের উচ্চ দাম অনুভব করেন।
সম্প্রতি একটি জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৭২ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন দেশের অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৪৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন, জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ই এখন তাদের প্রধান উদ্বেগের কারণ।
আগে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনও অর্থনীতির এই দিকটি ভালোভাবে বিবেচনা করেননি। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে যখন গ্যাসোলিনের দাম রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছিল এবং মূল্যস্ফীতি চরম আকার ধারণ করেছিল, তখন বাইডেন অর্থনীতির উন্নতির কথা বলেছিলেন।
এমনকি, তিনি একবার বলেছিলেন, “আমাদের অর্থনীতি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি।” যদিও পরবর্তীতে এই দাবিকে মিথ্যা বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাইডেনের এই ধরনের মন্তব্য সম্ভবত তার দলের জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছিল। কারণ, সাধারণ মানুষ তখন জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।
মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও, জিনিসপত্রের দাম তখনও বাড়ছিল। ফলে, বাইডেন প্রশাসনের অর্থনীতির উন্নতির কথা ভোটারদের খুব একটা আকৃষ্ট করতে পারেনি।
তবে, ট্রাম্পের কৌশল বাইডেনের থেকে কিছুটা আলাদা। বাইডেন যেখানে মূল্যবৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করেছিলেন, সেখানে ট্রাম্প সরাসরি মূল্যস্ফীতিকে অস্বীকার করছেন এবং এর জন্য বাইডেনকে দোষারোপ করছেন।
তবে, উভয় ক্ষেত্রেই ফল একই হতে পারে। কারণ, রাজনীতিবিদরা যখন ভোটারদের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে অস্বীকার করেন, তখন তাদের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা হল, এর একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকে। কয়েক বছর ধরে চলা মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের সঞ্চয়ে টান পড়ে, যা তাদের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তোলে।
উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে একজন সাধারণ আমেরিকান পরিবারকে আগের তুলনায় প্রতি মাসে প্রায় ২০৮ ডলার (প্রায় ২২,০০০ টাকা) বেশি খরচ করতে হচ্ছে একই পরিমাণ জিনিস কিনতে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূল্যবৃদ্ধির এই চাপ কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল (Jerome Powell) সম্প্রতি বলেছেন, উচ্চ মূল্য থেকে মুক্তি পেতে হলে মানুষের আয় বাড়াতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডেভিড প্লুফের মতে, বাইডেন প্রশাসনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল ভোটারদের চোখে দেখা বাস্তবতাকে অস্বীকার করা। তার মতে, “আমরা কোনোভাবেই মানুষকে বলতে পারি না যে, তারা যা দেখছে, তা সত্যি নয়।”
এই ধরনের ভুল ভবিষ্যতে রাজনীতিবিদদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়ে এবং তা আমাদের দেশেও অনুভূত হতে পারে।
তাই, মূল্যবৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে আলোচনা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
তথ্য সূত্র: সিএনএন