যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে ট্রাম্পের সময়ে উত্থান, বিশ্লেষকদের ভিন্নমত।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনের পর এক বছর পার হয়েছে। এই সময়ে দেশটির শেয়ার বাজার উল্লেখযোগ্য উন্নতি লাভ করেছে, বিশেষ করে এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকরা বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন, যা বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
গত এক বছরে এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ১৯.৬ শতাংশ বেড়েছে। এর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে শক্তিশালী করপোরেট আয় এবং প্রযুক্তি খাতে, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (Artificial Intelligence – AI) বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাণিজ্য যুদ্ধ এবং অস্থিরতা সত্ত্বেও শেয়ার বাজার স্থিতিশীল ছিল, যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বাজার উত্থানকে তাঁর নীতির ফল হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেছেন শেয়ার বাজারের এই বৃদ্ধি প্রমাণ করে তাঁর নেওয়া পদক্ষেপগুলো সঠিক ছিল। যদিও অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, বাজারের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে আরও কিছু বিষয়। তাদের মতে, মূলত দুটি কারণে এই উত্থান হয়েছে: প্রথমত, বিভিন্ন কোম্পানির শক্তিশালী আয় এবং দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তি খাতে, বিশেষ করে এআই-এর ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা।
আর্জেন্ট ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের পোর্টফোলিও ম্যানেজার জেড এলারব্রোকের মতে, ট্রাম্পের সময়ে শুল্ক এবং ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তের কারণে বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। তবে, বিনিয়োগকারীরা বাজারের দিকে নজর রেখেছিল এবং বাণিজ্য নিয়ে উদ্বেগকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছিল। প্রযুক্তি এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, কারণ এআই-এর বিশাল বিনিয়োগ বাজারের গতিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
শেয়ার বাজারের এই উত্থানে প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলোর অবদান অনেক। উদাহরণস্বরূপ, এনভিডিয়া (Nvidia) নামক একটি প্রযুক্তি কোম্পানির বাজার মূল্য ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা এস অ্যান্ড পি ৫০০-এর প্রায় ৮ শতাংশ।
তবে, এস অ্যান্ড পি ৫০০-এর একটি ভিন্ন সংস্করণ, যেখানে প্রতিটি কোম্পানির সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেই সূচকটি গত এক বছরে মাত্র ৬ শতাংশ বেড়েছে। এটি প্রমাণ করে, বাজারের এই বৃদ্ধিতে কিছু বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানির প্রভাব বেশি ছিল।
আরেকটি বিষয় হল, ট্রাম্পের সময়ে শুল্ক নীতি নিয়ে শুরুতে কিছু অস্থিরতা দেখা গেলেও, পরে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়। এই সময়ে এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক প্রায় ১৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তা আবার বাড়তে শুরু করে। বিশ্লেষকদের মতে, শুল্কের চূড়ান্ত প্রভাব শুরুতে যেমনটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, তেমনটা হয়নি বলেই বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
মার্কিন ট্রেজারি মার্কেটও এই সময়ে ভালো ফল করেছে। সরকারি বন্ডের চাহিদা বাড়ায়, ১০ বছর মেয়াদি ইউএস ট্রেজারি বন্ডের ফলন (yield) নভেম্বরের ৪.৪ শতাংশ থেকে কমে বর্তমানে ৪.১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বাজারের অস্থিরতা পরিমাপের সূচক সিবিওই ভোলাটিলিটি ইনডেক্স (CBOE Volatility Index) গত ছয় মাসে স্থিতিশীল ছিল।
ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “আমরা এমন নীতি চাই যা আমেরিকার জন্য সবচেয়ে ভালো, তবে বাজারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।
baird-এর বিনিয়োগ কৌশলবিদ রস মেইফিল্ডের মতে, বাজারের এই উত্থান অপ্রত্যাশিত ছিল না। তার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ট্রাম্প প্রশাসন বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ করেছে।
শেয়ার বাজারের এই উত্থান শুধু যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি ইনডেক্স গত এক বছরে ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক বেড়েছে ২৮ শতাংশ। পোল্যান্ড এবং গ্রিসের বাজারও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
ট্রুস্টের প্রধান বাজার কৌশলবিদ কেইথ লার্নারের মতে, “যুক্তরাষ্ট্রে যা ঘটছে, তা গুরুত্বপূর্ণ, তবে বাজারের সাফল্যের একমাত্র কারণ নয়। এই বাজারের মূল চালিকাশক্তি হল কর্পোরেট লাভ।
এই বাজারের গতিপ্রকৃতি বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারের সম্পর্ক রয়েছে। তাই, আন্তর্জাতিক বাজারের এই ধরনের পরিবর্তনগুলো আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন