যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক যুদ্ধের মূল পরিকল্পনাকারী ডিক চেনির প্রয়াণ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির প্রয়াণ

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি, যিনি জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের একজন ছিলেন, ৮৪ বছর বয়সে মারা গেছেন। পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।

ডিক চেনি ছিলেন একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। বিশেষ করে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এছাড়া, তিনি নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা বিস্তারেও জোরালো সমর্থন জুগিয়েছেন।

চেনির পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ডিক চেনি ছিলেন একজন মহান মানুষ। তিনি তার সন্তান ও নাতি-নাতনীদের দেশপ্রেম ও সাহসিকতার শিক্ষা দিয়ে গেছেন।

রিচার্ড ব্রুস চেনি, যিনি ডিক চেনি নামেই পরিচিত, ১৯৪১ সালের ৩০শে জানুয়ারি নেব্রাস্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রিপাবলিকান পার্টির প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন এবং ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত জর্জ ডব্লিউ বুশের অধীনে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও প্রতিনিধি পরিষদের হুইপসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ডিক চেনি ছিলেন অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি দেশের নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতিতে গভীর প্রভাব বিস্তার করেন। বিশেষ করে, ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর, তিনি ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণার পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখেন।

ইরাক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তার নেওয়া কিছু পদক্ষেপ ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। সমালোচকদের মতে, তিনি সেই সময়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভুল ব্যাখ্যা করেছিলেন এবং এর ফলশ্রুতিতে দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী একটি যুদ্ধের সূচনা হয়।

রাজনৈতিক জীবনে বিতর্কের পাশাপাশি, ব্যক্তিগত জীবনেও নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগেছেন চেনি। দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। ২০১২ সালে তিনি হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ডিক চেনির মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি বড় শূন্যতা তৈরি করেছে। একদিকে যেমন তিনি ছিলেন রক্ষণশীল নীতির কট্টর সমর্থক, তেমনি পরবর্তীতে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র সমালোচক হিসেবে পরিচিত হন। এমনকি, ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেছিলেন, যা অনেকের কাছে ছিল অপ্রত্যাশিত।

সাবেক এই ভাইস প্রেসিডেন্ট একসময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ও নিরাপত্তা বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষ করে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার নেওয়া পদক্ষেপগুলো নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *