মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা ফিরে আসার প্রেক্ষাপটে রিপাবলিকান স্পিকার মাইক জনসন এবং ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিসের মধ্যেকার সম্পর্ক ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। একসময় দুই দলের নেতাদের মধ্যেকার সহযোগিতার সম্পর্ক এখন তিক্ততায় রূপ নিয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে, যখন মাইক জনসন হাউসের স্পিকার নির্বাচিত হন, তখন হাকিম জেফ্রিস তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। এমনকি তারা একটি দ্বিদলীয় সম্পর্ক গড়ে তোলারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই সময় তাদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক হতো এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চলত। এই দুই নেতাই গভীর ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী এবং তাদের মধ্যেকার আলোচনায় প্রায়ই সেই বিষয়গুলো উঠে আসত। এমনকি জেফ্রিস, জনসনকে তার পদ টিকিয়ে রাখতেও সাহায্য করেছিলেন।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি বদলে যায়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক উত্থান এবং বিভিন্ন ইস্যুতে রিপাবলিকানদের কঠোর অবস্থানের কারণে জনসন ও জেফ্রিসের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। বিশেষ করে, সরকারের ব্যয় বরাদ্দ নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় তাদের সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে পড়ে। সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফেডারেল কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না এবং গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জনসন ও জেফ্রিস একে অপরের দলের ওপর দোষ চাপিয়েছেন এবং তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা নিরসনে উভয় নেতার মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন, যা বর্তমানে কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ, তাদের নিজ নিজ দলের সদস্যদের সমর্থন আদায় করতে সমস্যা হচ্ছে। সরকারি কার্যক্রম পুনরায় চালু করা, ব্যয় সংক্রান্ত বৃহত্তর চুক্তি এবং স্বাস্থ্যখাতের ভর্তুকি নিয়েও তাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।
বর্তমানে তাদের মধ্যে সরাসরি বৈঠক হয় না বললেই চলে। সর্বশেষ তারা গত ২৯শে সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসে মিলিত হয়েছিলেন। এরপর তাদের মধ্যে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা হলেও, সেগুলোকে ফলপ্রসূ বলা যাচ্ছে না। জনসম্মুখে তাদের মন্তব্যগুলো আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। জনসন সম্প্রতি এক বক্তৃতায় জেফ্রিস ও ডেমোক্রেটদের ‘সংশোধন অযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন। জবাবে জেফ্রিস রিপাবলিকানদের ‘মিথ্যাবাদী’ হিসেবে অভিহিত করেন।
তাদের সম্পর্কের অবনতির পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা মনে করেন, জনসন এখন ট্রাম্পের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছেন, যার ফলে তিনি নির্ভরযোগ্য আলোচনার টেবিলে থাকতে পারছেন না। এমনকি কিছু রিপাবলিকানও মনে করেন, ট্রাম্পই এখন আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জনসন ও জেফ্রিসের মধ্যেকার এই খারাপ সম্পর্ক দেশের আইনসভা এবং নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। এই পরিস্থিতিতে, সরকারের কার্যক্রম স্বাভাবিক করা এবং গুরুত্বপূর্ণ নীতি প্রণয়ন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। উভয় নেতার মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও বোঝাপড়ার অভাব দেখা যাচ্ছে, যা দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন