বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট মোকাবিলায় আসন্ন জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (COP30) -এর প্রস্তুতি চলছে ব্রাজিলের বেলেমে। কিন্তু সম্মেলনের আয়োজন নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা।
অন্যদিকে যেমন আবাসনের অভাব, তেমনই ব্রাজিলের বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্ত সম্মেলনের উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বেলেমে সাধারণত পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত হোটেল থাকলেও, COP30-এ প্রায় ৫০ হাজার মানুষের সমাগম হতে পারে।
এই বিপুল সংখ্যক মানুষের থাকার জায়গা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংকট। হোটেল রুমের ভাড়া আকাশছোঁয়া, যা অনেক উন্নয়নশীল দেশ এবং এনজিও-দের জন্য সমস্যা তৈরি করেছে।
এমনকি “লাভ হোটেল”-গুলিও এই পরিস্থিতিতে তাদের দরজা খুলতে প্রস্তুত। স্থানীয় এক “লাভ হোটেল”-এর মালিক রিকার্ডো টেক্সেইরা তাঁর হোটেলের কামরার “অশ্লীল” উপকরণগুলি সরিয়ে ফেলতে ব্যস্ত, যাতে তিনি সম্মেলনে আসা প্রতিনিধিদের স্বাগত জানাতে পারেন।
আবাসনের অভাব সম্মেলনের প্রস্তুতিতে একটি বড় বাধা, তবে এর থেকেও বড় উদ্বেগের কারণ হল ব্রাজিলের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত।
একদিকে, দেশটি চাইছে COP30-এর মাধ্যমে আমাজন বন রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরতে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, আমাজন নদীর মোহনায় তেল উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা পরিবেশবাদীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
পরিবেশকর্মীরা বলছেন, যে দেশ একই সাথে জলবায়ু রক্ষার কথা বলে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির প্রসারের অনুমতি দেয়, তাদের এই দ্বিচারিতা মেনে নেওয়া যায় না।
শুধু তাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বের অনেক দেশই তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে দেশগুলো বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে সম্মত হয়েছিল।
কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন দেশের পদক্ষেপ সেই লক্ষ্যের ধারেকাছেও নেই।
অনেক দেশ এখনো তাদের জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা জমা দেয়নি।
এমনকি, জলবায়ু পরিবর্তনের শীর্ষ দূষণকারী দেশগুলোও এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে।
আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হল, জলবায়ু কূটনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনকে “প্রতারণা” হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত COP30-এ কোনো উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে অন্যদের উৎসাহিত করবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইকে দুর্বল করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্মেলনের বাইরেও কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে।
পরিষ্কার শক্তির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আশা জাগাচ্ছে।
তবে, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং কিছু দেশের অসহযোগিতার কারণে COP30-এর ফল কী হবে, তা এখনই বলা কঠিন।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য এর প্রভাব অত্যন্ত গুরুতর।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে, যা আমাদের জীবন ও জীবিকার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
তাই, COP30-এর সাফল্য এবং এর সিদ্ধান্তগুলো বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: CNN