ঐতিহাসিক ঘড়ি: ডি-ডে’র সেনাদের হেলমেট থেকে তৈরি!

যুদ্ধদিনের স্মৃতি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেনাদের হেলমেট ও বালু দিয়ে ঘড়ি বানাচ্ছে এক কোম্পানি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি আজও বিশ্বজুড়ে মানুষের মনে গভীর দাগ কাটে। সেই ঐতিহাসিক ঘটনার প্রতি সম্মান জানাতে, কল অ্যান্ড ম্যাকআর্থার নামের একটি ঘড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা তৈরি করেছে অভিনব এক ঘড়ি।

তাদের তৈরি ঘড়িগুলি শুধু সময় দেখানোর যন্ত্র নয়, বরং ইতিহাসের এক একটি জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। সম্প্রতি তারা তৈরি করেছে ‘নরম্যান্ডি ১৯৪৪’ নামের বিশেষ ঘড়ি, যা তৈরি হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈন্যদের ব্যবহৃত হেলমেট, ব্যাগ এবং নরম্যান্ডির সমুদ্র সৈকতের বালু দিয়ে।

বেলজিয়ামের এই ঘড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেবাস্তিয়ান কোলেন জানান, “এই ঘড়ি মানুষ সময় জানার জন্য কিনবে না, কিনবে ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে।” ২০১৬ সাল থেকে তারা এমন অভিনব ঘড়ি তৈরি করছে, যেখানে অতীতের স্মৃতিচিহ্নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

এর আগে তারা পার্ল হারবারের সমুদ্রের জল এবং উল্কাপিণ্ড থেকে আনা উপাদান ব্যবহার করে ঘড়ি তৈরি করেছে।

এই ঘড়ি বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করাও ছিল বেশ কঠিন। উদাহরণস্বরূপ, সৈন্যদের ব্যবহৃত হেলমেট সংগ্রহ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে।

এরপর, মূল নকশা ঠিক রেখে, হেলমেটগুলোকে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কেটে ঘড়ির ডায়াল তৈরি করা হয়। প্রতিটি হেলমেট থেকে প্রায় ২০টি ঘড়ি তৈরি করা সম্ভব।

ঘড়িটির স্ট্র্যাপ তৈরি করা হয়েছে সৈন্যদের ব্যবহৃত ব্যাগ থেকে। ঘড়ির পেছনের অংশে রাখা হয়েছে নরম্যান্ডি সমুদ্র সৈকতের বালি। এই বালু সংগ্রহের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়েছে, কারণ ফ্রান্সে সমুদ্র সৈকত থেকে বালি নেওয়া আইনত দণ্ডনীয়।

এই ঘড়িটির দুটি সংস্করণ রয়েছে: একটি ‘লেগ্যাসি’ সংস্করণ, যেখানে সুইস প্রযুক্তির উন্নতমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে। এর দাম ১,৭৪৯ মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ১ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা)।

অন্য সংস্করণটি তৈরি হয়েছে জাপানি যন্ত্রাংশ দিয়ে, যার দাম ৬৯৯ মার্কিন ডলার (প্রায় ৭৬ হাজার টাকা)।

ইতিহাসের প্রতি এই বিশেষ মনোযোগের কারণে, কল অ্যান্ড ম্যাকআর্থার তাদের ঘড়িগুলোতে বাস্তব উপকরণ যুক্ত করে থাকে।

অ্যাপোলো ১১ মিশনে উৎসর্গীকৃত ঘড়িতে চাঁদের ধুলো এবং ১৯৪১ সালে পার্ল হারবারে জাপানি হামলায় নিহতদের স্মরণে তৈরি ঘড়িতে সমুদ্রের জল ব্যবহার করা হয়েছিল।

বর্তমানে, তারা জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ‘ব্যাটল অফ দ্য বুলজ’ (Battle of the Bulge) নিয়ে ঘড়ি তৈরির পরিকল্পনা করছে।

এই ঘড়ি তৈরির ধারণা সেবাস্তিয়ান কোলেনের মাথায় আসে বেলজিয়ামের একটি সামরিক সংগ্রহশালায় যাওয়ার পর। এরপর তিনি নরম্যান্ডি যান এবং সেখানকার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন।

কোলেন মনে করেন, “ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে, সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”

ঘড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে নৈতিক দিকগুলোও বিবেচনা করে।

সৈন্যদের ব্যাগের কিছু অংশে রক্তের দাগ থাকতে পারে। ঘড়ির প্রস্তুতকারকরা সেই অংশগুলো ব্যবহার করবেন কিনা, সেই বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। তাদের মতে, এটি খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়।

কল অ্যান্ড ম্যাকআর্থারের এই উদ্যোগ, ইতিহাসের প্রতি মানুষের আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে তোলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে, এই ঘড়িগুলো নিঃসন্দেহে একটি অনন্য প্রয়াস।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *