মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অক্টোবর মাসে ছাঁটাইয়ের ঘোষণা বেড়েছে ব্যাপক হারে। গত ২২ বছরের মধ্যে এই বছরের অক্টোবর মাসেই কর্মী ছাঁটাইয়ের সংখ্যা সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘চ্যালেঞ্জার, গ্রে অ্যান্ড ক্রিসমাস’-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসে ১৫৩,০০০ এর বেশি কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭৫ শতাংশ বেশি।
২০০৩ সালের পর অক্টোবর মাসে এত বেশি কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা আর ঘটেনি। শুধু তাই নয়, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ১০ লাখেরও বেশি কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “এই সংখ্যা অক্টোবরের গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং ২০০৮ সালের পর কোনো একটি চতুর্থাংশে সর্বোচ্চ। ২০০৩ সালের মতো এবারও একটি নতুন প্রযুক্তি বাজারের চিত্র পাল্টে দিচ্ছে।”
প্রতিষ্ঠানটি আরও জানিয়েছে, কোভিড-১৯ অতিমারীর পর আমেরিকার শ্রমবাজার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার বৃদ্ধি, ভোক্তা ও কর্পোরেট ব্যয় হ্রাস এবং ক্রমবর্ধমান খরচ—এগুলো কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
এরমধ্যে, অ্যামাজন (Amazon) এবং টার্গেটের (Target) মতো বড় কোম্পানিগুলো সম্প্রতি কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে এবং এর পেছনে তারা AI-এর কথা উল্লেখ করেছে। যদিও কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা হলেই তাৎক্ষণিকভাবে বেকারত্ব বাড়ে না।
অন্যদিকে, মার্কিন সরকারের অচলাবস্থার কারণে দেশটির শ্রমবাজারের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা কঠিন হয়ে পড়েছে। অক্টোবর মাস থেকে সরকারি অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান প্রকাশ বন্ধ রয়েছে, যার মধ্যে শ্রম বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসংস্থান বিষয়ক প্রতিবেদনও অন্তর্ভুক্ত।
এই প্রতিবেদনে বেকারত্বের হার এবং মাসিক বেতন বৃদ্ধির তথ্য থাকে। আগামী শুক্রবার প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল সেপ্টেম্বরের কর্মসংস্থান বিষয়ক প্রতিবেদন।
কিন্তু তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি এবং অক্টোবরের প্রতিবেদনও এ মাসে পাওয়া যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তাদের মতো নীতিনির্ধারকদের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ এবং বিনিয়োগকারীরা এখন মার্কিন অর্থনীতির অবস্থা বুঝতে বিকল্প তথ্যের দিকে ঝুঁকছেন। উদাহরণস্বরূপ, তারা বুধবারের ADP-এর দেওয়া বেসরকারি খাতের বেতন বিষয়ক তথ্যের ওপর এবং চ্যালেঞ্জার রিপোর্টের দিকে নজর রাখছেন।
ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল গত মাসের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, সরকারি পরিসংখ্যানের বিকল্প হতে পারে না বেসরকারি খাতের তথ্য, যা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির মূল পরিমাপক হিসেবে পরিচিত।
সরকারি তথ্য প্রকাশে বিলম্ব হলে আর্থিক নীতি প্রণয়নে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং ভবিষ্যতে সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। পাওয়েল আরও বলেন, “এতে আরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মী ছাঁটাইয়ের এই ঊর্ধ্বগতি বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, এর কিছু সম্ভাব্য প্রভাব আমাদের দেশেও পড়তে পারে।
বিশেষ করে, পোশাক শিল্পের ওপর এর প্রভাব আসতে পারে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একটি প্রধান বাজার। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে।
বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন