মনের উপর আবেগের প্রভাব: স্মৃতিশক্তি এবং কীভাবে সামলাবেন
আমরা মানুষ, আর আবেগ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। হাসি, কান্না, রাগ, ভয় – এমন নানা অনুভূতি আমাদের মনে খেলা করে।
এই আবেগগুলি শুধু আমাদের মানসিক অবস্থাই নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং স্মৃতিশক্তির উপরও গভীর প্রভাব ফেলে। কখনও কখনও, তীব্র আবেগ আমাদের স্মৃতিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে, আবার কখনও তা দুর্বল করে দিতে পারে।
তাহলে, আবেগ কীভাবে আমাদের স্মৃতিকে প্রভাবিত করে, আসুন জেনে নেওয়া যাক।
ধরুন, আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পরীক্ষার আগের মুহূর্তে অতিরিক্ত উদ্বেগে থাকলে, পড়া মনে রাখতে সমস্যা হতে পারে। এর কারণ হলো, যখন আমরা মানসিক চাপে থাকি, তখন আমাদের শরীরে কর্টিসল নামক একটি হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে।
অতিরিক্ত কর্টিসলের কারণে স্মৃতি তৈরি এবং তা মনে রাখার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। তবে, পরীক্ষার কয়েক ঘণ্টা আগে যদি আপনি শান্তভাবে পড়াশোনা করেন, তবে স্মৃতিগুলি আরও ভালোভাবে মস্তিষ্কে গেঁথে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, শক্তিশালী আবেগপূর্ণ ঘটনাগুলো আমাদের মনে গেঁথে থাকে, যা সহজে ভোলা যায় না।
উদাহরণস্বরূপ, আপনার প্রথম ভালোবাসার মুহূর্ত বা কোনো প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানো স্মরণীয় একটি মুহূর্ত সম্ভবত বহুদিন মনে থাকবে।
কারণ, এই ধরনের আবেগপূর্ণ স্মৃতিগুলি মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা এবং হিপোক্যাম্পাস নামক দুটি অঞ্চলের সক্রিয়তাকে একসঙ্গে বাড়িয়ে তোলে। অ্যামিগডালা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে, আর হিপোক্যাম্পাস স্মৃতি সংরক্ষণে সাহায্য করে।
তবে, সব আবেগই যে স্মৃতিকে শক্তিশালী করে, তা কিন্তু নয়।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা বা বিষণ্ণতা স্মৃতিশক্তির উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘকাল ধরে মানসিক কষ্টের মধ্যে থাকলে, মস্তিষ্কের স্মৃতি-সংক্রান্ত কোষগুলো দুর্বল হয়ে যায়।
এর ফলে, নতুন কিছু মনে রাখা বা পুরোনো স্মৃতি মনে করার ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে।
তাহলে, আবেগ যখন স্মৃতিশক্তির উপর খারাপ প্রভাব ফেলে, তখন কী করা উচিত?
- মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন: যোগা, ধ্যান বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
- প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলুন: আপনার অনুভূতিগুলো কাছের মানুষের সঙ্গে শেয়ার করুন। এতে মানসিক চাপ কিছুটা হলেও কমতে পারে।
- ইতিবাচক চিন্তা করুন: জীবনের ভালো দিকগুলো নিয়ে ভাবুন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
- বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন: যদি দেখেন, স্মৃতিশক্তির সমস্যা দীর্ঘ দিন ধরে চলছে, তবে একজন মনোবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক থেরাপি এবং ওষুধ, যেমন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, স্মৃতিশক্তি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করতে পারে।
আমাদের সমাজে অনেক সময় মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তবে, মনে রাখতে হবে, আবেগ এবং স্মৃতি একে অপরের সঙ্গে জড়িত।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে, স্মৃতিশক্তিও উন্নত থাকে। তাই, নিজের প্রতি যত্ন নিন এবং প্রয়োজনে সাহায্য চাইতে দ্বিধা করবেন না।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন