মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়লা খনি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সংকট: নিরাপত্তা বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় বাড়ছে বিপদ।
কয়লা খনি শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ সব সময়ই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। উন্নত দেশগুলোতেও শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি সবসময় আলোচনার কেন্দ্রে থাকে।
সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়লা খনি শ্রমিকদের মধ্যে ব্ল্যাক লাং (Black Lung) রোগের প্রাদুর্ভাব নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ব্ল্যাক লাং আসলে ফুসফুসের একটি মারাত্মক রোগ, যা কয়লার কণা দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে হয়।
এর ফলে শ্রমিকদের শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা হ্রাস পায়, যা জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ।
যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে, বিশেষ করে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াতে (West Virginia), ব্ল্যাক লাং রোগের প্রকোপ বাড়ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।
এর মূল কারণ হল, খনি শ্রমিকরা এখন এমন শিলা (silica) মিশ্রিত পাথরের স্তরের মধ্যে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন, যেখানে আগেকার তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে ক্ষতিকর সিলিকা-যুক্ত ধুলো বিদ্যমান। এই ধুলো শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করছে।
বিষয়টি আরও জটিল হয়েছে রাজনৈতিক কিছু সিদ্ধান্তের কারণে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যে বিধি-নিষেধগুলো ছিল, সেগুলোকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এর ফলে খনি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা আরও হুমকির মুখে পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, খনি শ্রমিকদের সিলিকা-যুক্ত ধুলোর সংস্পর্শে আসার পরিমাণ কমানোর জন্য যে নিয়ম তৈরি করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়নে এখন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
শ্রমিক সংগঠনগুলো এর বিরোধিতা করছে এবং তাঁদের দাবি, সরকার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আরও বেশি মনোযোগ দিক।
ব্ল্যাক লাং রোগের শিকার হওয়া শ্রমিকদের জীবন অত্যন্ত কষ্টের। রোগটি তাঁদের শ্বাস নিতে কষ্ট দেয় এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম কঠিন করে তোলে।
অনেক শ্রমিক অল্প বয়সেই কর্মক্ষমতা হারান এবং তাঁদের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এই রোগে আক্রান্ত শ্রমিকদের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং অনেক ক্ষেত্রে তা দীর্ঘমেয়াদী হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্ল্যাক লাং রোগের বিস্তার রোধ করতে হলে, খনি শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
এর মধ্যে রয়েছে, উন্নতমানের মাস্ক ও শ্বাসযন্ত্র সরবরাহ করা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং কাজের পরিবেশকে নিরাপদ রাখা। এছাড়া, শ্রমিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাঁদের অধিকার সম্পর্কে অবগত করাটাও জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি শ্রমিক নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক নীতিমালার গুরুত্বের বিষয়টি আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের জন্যও এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে।
শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে, সরকারের পাশাপাশি মালিকপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনগুলোকেও একযোগে কাজ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস