আলাস্কার আদিবাসী গ্রামগুলোতে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব, বাস্তুহারা মানুষের ভবিষ্যৎ কী?
আলাস্কার পশ্চিমাঞ্চলে, বরফের চাদরে মোড়া প্রান্তরে অবস্থিত আদিবাসী গ্রামগুলোতে সম্প্রতি আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় ‘হ্যালং’। এর ফলে সেখানকার ঘরবাড়িগুলো লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে, অনেক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে কুইগিলিংক ও কিপনুক। সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা আজ চরম অনিশ্চয়তার মুখে। আবহাওয়ার পরিবর্তন এই অঞ্চলের মানুষের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলছে।
কুইগিলিংক গ্রামের বাসিন্দা ড্যারেল জন নামের একজন ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসযজ্ঞের পর তাঁর গ্রামে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, “আমি আমার সমাজকে ছেড়ে যেতে পারিনি।”
কিন্তু তাঁর এবং অন্যান্যদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনো অজানা। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার বাস্তুহারা মানুষগুলো চরম দুর্ভোগের শিকার হতে পারে। রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো মেরামতের চেষ্টা করছে এবং বাস্তুচ্যুত ১,৬০০ জনের বেশি মানুষকে সহায়তা করছে।
তাদের মধ্যে অনেকে আলাস্কার বৃহত্তম শহর অ্যাঙ্করেজে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে তাঁদের জীবনযাত্রা গ্রামীণ জীবন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
কয়েক বছর ধরেই এখানকার গ্রামগুলোতে ভাঙন দেখা যাচ্ছে। সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি, মাটির ক্ষয় এবং জমাট বাঁধা মাটি (permafrost)-এর গলন এখানকার জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে। ড্যারেল জন চান, তাঁর গ্রামটি যেন কোনোমতে টিকে থাকে, যাতে তাঁরা গ্রামটি সরানোর পরিকল্পনা করতে পারেন।
আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে এখানকার ঝড়গুলো আরও শক্তিশালী হচ্ছে। বরফের আচ্ছাদন কমে যাওয়ায় ভূমি ক্ষয়ের পরিমাণ বাড়ছে। কুইগিলিংক গ্রাম দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য ও ফেডারেল সরকারের সাহায্য চেয়ে আসছে।
এখানকার আদিবাসী গ্রামগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী ৫০ বছরে এই ক্ষতি মোকাবিলায় প্রায় ৪.৩ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।
কুইগিলিংকের হ্যারি ফ্রেন্ড নামের একজন জানিয়েছেন, তিনি তাঁর ৬৪ বছরের জীবনে এমন ভয়ঙ্কর বন্যা দেখেননি। ঝড়ের রাতে তাঁর বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এখন তাঁর পরিবার অন্য একটি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। হ্যারি তাঁর কিছু জিনিসপত্র উদ্ধারের জন্য ফিরে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “এটা আমাদের ভূমি। আমাদের তো ঘরে ফিরতেই হবে।”
আরেকজন বাসিন্দা, কিপনুকের ড্যারেল জন। তিনি জানান, সম্ভবত তাঁরা আর কোনো দিন তাঁদের গ্রামে ফিরতে পারবেন না। তিনি অ্যাঙ্করেজে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বসে সরকারি সাহায্যের জন্য আবেদন করছিলেন।
তিনি বলেন, “এখানে টয়লেট আছে, যা আমাদের গ্রামে নেই।” কিন্তু তাঁর জীবিকার উপায় কী হবে, সে বিষয়ে তিনি জানেন না।
আলাস্কার এই ঘটনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের একটি উদাহরণ। সেখানকার আদিবাসী জনজীবন আজ চরম হুমকির মুখে। তাঁদের টিকে থাকার লড়াই বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হওয়া অন্যান্য জনগোষ্ঠীর জন্য একটি সতর্কবার্তা।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস