আদালতে হারলে কী হবে? ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে চাঞ্চল্যকর খবর!

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট যদি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে আরোপিত শুল্ক বাতিল করে দেয়, তাহলে কী হবে? এমন একটি প্রশ্ন এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মহলে আলোচনার বিষয়। কারণ, আদালতের এমন সিদ্ধান্তের পর ট্রাম্প প্রশাসন বিকল্প পথে শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন মোড় নিতে পারে।

বুধবার (গতকাল) সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শেষে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। শুনানিতে উদারপন্থী ও রক্ষণশীল বিচারপতিরা শুল্কের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনের (International Emergency Economic Powers Act) অধীনে শুল্ক আরোপ করেছিল।

এই আইনের আওতায় চীন, ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশের ওপর উচ্চহারে শুল্ক বসানো হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই শুল্কের পরিমাণ ছিল ১৫ থেকে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত। এর ফলে মার্কিন ব্যবসায়ীদের প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলার শুল্ক বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, সুপ্রিম কোর্ট যদি ট্রাম্পের শুল্ক বাতিল করে দেয়, তবে প্রশাসন অন্য উপায়ে একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে।

এর জন্য তাদের হাতে আরও কিছু বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে।

  • ১৯৭৪ সালের বাণিজ্য আইনের ১২২ ধারা: এই ধারা অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সর্বোচ্চ ১৫০ দিনের জন্য ১৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করতে পারেন। তবে এই সময়সীমা পার হওয়ার পর কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
  • ১৯৬২ সালের বাণিজ্য সম্প্রসারণ আইনের ২৩২ ধারা: এই ধারা ব্যবহার করে প্রেসিডেন্ট জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারেন। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্তের প্রয়োজন হবে। ট্রাম্প তার শাসনামলে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, তামা, কাঠ, আসবাবপত্র, গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর এই ধারার অধীনে শুল্ক আরোপ করেছিলেন।
  • ১৯৭৪ সালের বাণিজ্য আইনের ৩০১ ধারা: এই ধারা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (US Trade Representative) অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্ত করতে পারেন। কোনো দেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসার ক্ষতি করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ করা যেতে পারে।
  • ১৯৩০ সালের শুল্ক আইনের ৩৩৮ ধারা: এই ধারা অনুযায়ী, কোনো দেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করে, তাহলে তাদের পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা যেতে পারে। তবে এই ধারা কার্যকর করলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (World Trade Organization) নিয়ম ভাঙা হতে পারে এবং এর ফলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের ফলে বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আসলেও, শুল্ক আরোপের ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।

এর কারণ হলো, ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ককে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ রয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য সহযোগী।

যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক নীতির কারণে বাংলাদেশের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে, তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়লে তা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করতে হবে এবং সম্ভাব্য ক্ষতির মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *