ভ্যাটিকান সিটি, নভেম্বর – পোপ লিও চতুর্দশ-এর কার্যকালের ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে। এই সময়ে তিনি কিভাবে তাঁর পূর্বসূরি পোপ ফ্রান্সিসের পথ অনুসরণ করছেন এবং কোথায় বা নিজস্বতা ফুটিয়ে তুলছেন, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা।
খবর অনুযায়ী, নতুন পোপ ইতোমধ্যে তাঁর কাজের ধরন এবং স্টাইল তৈরি করতে শুরু করেছেন।
গত মে মাসে আকস্মিকভাবে পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর গ্রীষ্মের কঠিন সময়টা পেরিয়ে এখন যেন ধীরে ধীরে তিনি অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে সামাজিক ন্যায়বিচার, রক্ষণশীল ক্যাথলিকদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং নিজের কিছু সিদ্ধান্তে তিনি আগের পোপের থেকে আলাদা হতে শুরু করেছেন।
পোপ ফ্রান্সিসের দেখানো পথ ধরেই যেন হেঁটে চলেছেন নতুন পোপ। দরিদ্র মানুষের প্রতি ক্যাথলিক চার্চের বিশেষ মনোযোগের বিষয়টি তুলে ধরে লিও তাঁর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে বলেন, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সমাজের ধনী ব্যক্তিরা বিলাসিতার মধ্যে জীবনযাপন করেন, অথচ গরিব মানুষরা প্রান্তিকভাবে দিন কাটায়।
পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রেও পোপ ফ্রান্সিসের নীতি অনুসরণ করছেন লিও। তিনি একটি নতুন প্রার্থনা পদ্ধতির মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এমনকি, ভ্যাটিকান সিটিকে বিশ্বের প্রথম কার্বন-নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনাও অনুমোদন করেছেন তিনি।
আর্জেন্টিনার ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস সমাজের প্রান্তিক মানুষের কথা বলতেন, তাঁদের পাশে থাকার জন্য চার্চের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পোপ লিওও সেই একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি ভূমি, বাসস্থান এবং কাজের অধিকারের ওপর জোর দিয়েছেন। তাঁর মতে, এগুলো মানুষের পবিত্র অধিকার।
তবে, কিছু ক্ষেত্রে পোপ লিও নিজের পথ তৈরি করছেন। যেমন, তিনি ভ্যাটিকানের ব্যাংকে আর্থিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার বিষয়ে পোপ ফ্রান্সিসের একটি আইন বাতিল করেছেন। এর পরিবর্তে, তিনি হলি সি-র বিনিয়োগ কমিটিকে ভ্যাটিকানের বাইরের ব্যাংক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন, যদি এতে ভালো আর্থিক সুবিধা পাওয়া যায়।
ঐতিহ্যপূর্ণ লাতিন ভাষায় গণজমায়েতের অনুমতি দিয়েও তিনি রক্ষণশীলদের মন জয় করেছেন। এমনকি, তিনি ভ্যাটিকানে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন এবং তাঁদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
নতুন পোপের ব্যক্তিগত জীবনেও এসেছে পরিবর্তন। তিনি এখন সোমবার ও মঙ্গলবার তাঁর অবকাশ যাপনের জন্য ক্যাস্টেল গ্যাান্ডলফোতে যান। সেখানে তিনি টেনিস খেলেন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের বিতর্ক নিয়ে তিনি মুখ খুলেছেন এবং নিজের মতামত জানিয়েছেন। তাঁর এই পদক্ষেপ রক্ষণশীল মহলে কিছুটা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
পোপ লিওর প্রথম বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে লেবানন ও তুরস্ক যাওয়ার কথা রয়েছে। জর্ডানের রানী রানিয়া তাঁকে এই সফরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর দেন।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস