সমুদ্রে বিলীন হচ্ছে বাড়ি! উত্তর ক্যারোলিনার এই দৃশ্য কি ভয়ঙ্কর সংকেত?

উত্তর ক্যারোলিনার উপকূলবর্তী অঞ্চলে সমুদ্রের গ্রাসে একের পর এক বাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনা শুধু একটি অঞ্চলের বিপর্যয় নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য এক অশনি সংকেত।

সম্প্রতি, উত্তর ক্যারোলিনার হাটোর‍্যাস দ্বীপের বুকস্টন ও রোডান্থে গ্রাম দুটিতে গত কয়েক বছরে প্রায় ২৭টি বাড়ি সাগরে ভেঙে পড়েছে।

স্ট্যাসি মরগান এবং তার স্বামী ব্র্যান্ডন ডডিক-এর কথা ভাবুন। তারা তাদের স্বপ্নের সমুদ্র-সংলগ্ন বাড়িটি কিনেছিলেন, যেখানে অবসর জীবন কাটানোর স্বপ্ন ছিল তাদের। কিন্তু বাড়ি কেনার মাত্র পাঁচ মাস পরেই তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙে যায়।

তাদের বাড়িটি সমুদ্রের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এই অঞ্চলে ভূমি ক্ষয় হচ্ছে দ্রুতগতিতে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়ার আগেই যেন সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হাটোর‍্যাস-এর এই পরিস্থিতি অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য একটি সতর্কবার্তা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আরও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় এবং সমুদ্রের আগ্রাসন বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

এই অঞ্চলের অনেক বাড়ি মূল ভূখণ্ড থেকে বেশ দূরে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের ঢেউ তাদের দিকে এগিয়ে এসেছে। ইস্ট ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটির উপকূলীয় গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডিন রাইড করব্যাটের মতে, গত কয়েক দশকে সমুদ্রের তীরবর্তী অঞ্চল ক্রমশ ভাঙতে শুরু করেছে, যা বাড়িগুলোকে এখন সমুদ্রের একেবারে কাছে নিয়ে এসেছে।

মরগান ও ডডিক বুঝতে পারছিলেন, তাদের বাড়িটি হয়তো একসময় সরিয়ে নিতে হবে। কিন্তু তারা ভেবেছিলেন, হাতে এখনো অনেক সময় আছে। কিন্তু তাদের সেই ধারণা ভেঙে যায় যখন একটি ঝড়ে তাদের বাড়ির ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, তাদের চোখের সামনেই তাদের স্বপ্নের বাড়িটি সাগরে তলিয়ে যায়।

এই অঞ্চলের আরেক বাসিন্দা ল্যাট উইলিয়ামস। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করছেন। উইলিয়ামসের পরিবার প্রায় ৪৫ বছর ধরে এই বাড়ির মালিক।

সম্প্রতি হ্যারিকেন হামবার্তো এবং ইমেল্ডার আঘাতে তার বাড়িরও ক্ষতি হয়েছে। তিনি এখন দ্রুত তার বাড়িটি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

বাড়িটি সরানোর জন্য প্রায় ৫৫ হাজার ডলার খরচ হবে, যা তার জন্য বিশাল বোঝা। তিনি জানিয়েছেন, তিনি চান না তার এত স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি সাগরে বিলীন হয়ে যাক।

উইলিয়ামস আরও জানান, ন্যাশনাল ফ্লাড ইন্স্যুরেন্স প্রোগ্রাম (NFIP) তাকে বাড়ি সরানোর জন্য কোনো সাহায্য করবে না। নিয়ম অনুযায়ী, বাড়িটি ভেঙে গেলে তিনি ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন, কিন্তু সরিয়ে নিলে কোনো সাহায্য পাওয়া যায় না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বুকস্টন ও রোডান্থের এই ঘটনা উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য একটি ‘ক্যানারি ইন দ্য কোল মাইন’-এর মতো। অর্থাৎ, একটি সতর্কবার্তা।

নর্থ ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটির গবেষক লরা মুর মনে করেন, ভূমি ক্ষয় প্রতিরোধের জন্য বালু ভরাট প্রকল্পগুলি (beach nourishment) হয়তো ক্ষয় কিছুটা কমাতে পারে, তবে তা যথেষ্ট নয়।

সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষয়রোধে কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ না নেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মরগান জানান, তাদের মনে হচ্ছে যেন কেউ তাদের সাহায্য করছে না।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলও এর ঝুঁকিতে রয়েছে। সুতরাং, উত্তর ক্যারোলিনার এই ঘটনা আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

আমাদের এখনই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের সুরক্ষার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *