সমুদ্রে হারানো ৪০,০০০ সৈন্য: তাদের খুঁজে বের করতে বিজ্ঞানীরা কী করছেন?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া ৪০,০০০ এর বেশি মার্কিন সেনার সন্ধান পেতে এক অভিনব উপায় খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা। পরিবেশ থেকে সংগৃহীত ডিএনএ (eDNA) বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাঁদের দেহাবশেষ খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

এই গবেষণার ফল সৈন্যদের পরিবারের জন্য যেমন আশা জাগাচ্ছে, তেমনই অনুসন্ধানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ‘পো-মিয়া অ্যাকাউন্টিং এজেন্সি’ (DPAA) দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রের গভীরে হারিয়ে যাওয়া সৈন্যদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সাধারণত, ধ্বংসাবশেষের মধ্যে তাঁদের দেহাবশেষ বা ব্যক্তিগত জিনিস খুঁজে বের করাই ছিল মূল লক্ষ্য।

কিন্তু বিশাল সমুদ্রের গভীরে, যেখানে অনুসন্ধান চালানো অত্যন্ত কঠিন, সেখানে এই কাজটি সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। এবার eDNA প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই কাজ আরও সহজ করার চেষ্টা চলছে।

eDNA হল পরিবেশগত ডিএনএ। মৃত প্রাণী বা মানুষের শরীরের কণা, যা মাটি, পলি বা জলে মিশে থাকে। বিজ্ঞানীরা এই eDNA বিশ্লেষণ করে মৃত ব্যক্তির ডিএনএ শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন।

ওডস হোল ওশানোগ্রাফিক ইন্সটিটিউশনের (WHOI) বিজ্ঞানী, ড. কার্সটিন মায়ার-কাইজার এই গবেষণায় DPAA-কে সহায়তা করছেন। তাঁর মতে, এই পদ্ধতি সফল হলে তা DPAA-এর অনুসন্ধানে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।

গবেষণার অংশ হিসেবে, বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন স্থানের ধ্বংসাবশেষ থেকে জল এবং পলির নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সাগরে ডুবে যাওয়া যুদ্ধবিমান, মিশিগান এবং অন্টারিও’র মাঝে অবস্থিত হ্রদ হুরন এবং ইতালির উপকূলের কিছু স্থান।

নমুনাগুলি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কিছু স্থানে পুরনো ডিএনএ-র অস্তিত্ব রয়েছে। এই ডিএনএ সম্ভবত হারিয়ে যাওয়া সৈন্যদের হতে পারে।

তবে, এই গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ডিএনএ-র সঠিক বয়স নির্ধারণ করা কঠিন। এছাড়াও, পরিবেশের বিভিন্ন কারণ যেমন— জলের তাপমাত্রা, স্রোত, ইত্যাদি ডিএনএ-কে প্রভাবিত করতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হল, eDNA ব্যবহার করে মানবদেহের ডিএনএ সনাক্ত করা সম্ভব কিনা, তা পরীক্ষা করা। প্রাথমিক ফলাফলগুলি উৎসাহজনক হলেও, এখনও অনেক কাজ বাকি।

ডিএনএ-র উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে এবং এই পদ্ধতির কার্যকারিতা প্রমাণ করতে আরও গভীর অনুসন্ধানের প্রয়োজন। DPAA-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা এই গবেষণার ফলাফল পর্যালোচনা করছেন এবং ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা বিবেচনা করছেন।

এই গবেষণা শুধু বিজ্ঞানীদের জন্য নয়, হারিয়ে যাওয়া সৈন্যদের পরিবারের কাছেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে প্রিয়জনদের খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা তাঁদের শোক কিছুটা হলেও কমাতে সাহায্য করবে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *