মেক্সিকোতে নারীদের উপর যৌন হেনস্থার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
গণপরিবহন থেকে শুরু করে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ—সবখানেই নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। সম্প্রতি দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেইনবামকে একজন মাতাল ব্যক্তি জনসম্মুখে হেনস্থা করার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এর প্রতিকার চেয়ে তিনি যৌন হেনস্তাকে সব রাজ্যে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার ঘোষণা দিয়েছেন।
পুরুষ চালকদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বাঁচতে অনেক নারী এখন নারী চালকদের রাইড শেয়ারিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন। মেক্সিকোতে নারীদের জন্য ‘আমোররাস’ (AmorrAs) নামের একটি বিশেষ নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে, যেখানে নারীরা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারেন।
এই নেটওয়ার্কের আওতায় নারীদের জন্য নারী চালকরা গাড়ি চালান।
ঘটনাটি কয়েক বছর আগের। নিনফা ফুয়েন্তেস নামের একজন নারী একবার একটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে চালক তাকে ফোন নম্বর দিতে এবং ভ্যালেন্টাইনস ডে-র পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান।
ফুয়েন্তেস জানান, সেই অভিজ্ঞতা তার কাছে বিভীষিকাময় ছিল। এরপর থেকে তিনি গণপরিবহন বা রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করা বন্ধ করে দেন।
আমোররাস নেটওয়ার্কের ধারণাটি আসে দেবাণী এসকোবার নামের এক তরুণীর মৃত্যুর পর। ২০২২ সালে মন্টেরি শহরের একটি নির্জন রাস্তায় ট্যাক্সি থেকে নামার পর তিনি নিখোঁজ হন এবং পরে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।
এরপর কারিনা আলবা নামের এক নারী এই নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। বর্তমানে এখানে ২০ জনের বেশি নারী চালক কাজ করছেন এবং প্রতি বছর ২ হাজারের বেশি নারী এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করেন।
দিয়ান কলমেনোরো নামের একজন নারী জানান, আমোররাসের মাধ্যমে ভ্রমণের আগে তিনি গণপরিবহন, বিশেষ করে মেট্রো এবং রাইড শেয়ারিং অ্যাপে সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, “আগে আমি এমন চালকের সঙ্গেও যেতে বাধ্য হয়েছি, যিনি আমাকে ও আমার সঙ্গীকে বলেছিলেন যে তিনি অনেক নারীকে মারধর করেছেন।”
মেক্সিকোর ন্যাশনাল পাবলিক সিকিউরিটি সিস্টেমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৬১,৭১৩টি যৌন অপরাধের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে ৮,৭০৪টি।
এছাড়া, বিভিন্ন নারী অধিকার সংস্থাগুলোর মতে, যৌন হয়রানির শিকার হওয়া অনেক ঘটনাই কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয় না। কারণ, ভুক্তভোগীরা সমাজের খারাপ নজরের শিকার হন এবং বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক সময় নানান জটিলতা দেখা যায়।
আইনজীবী নর্মা এসকোবার, যিনি আমোররাসের সঙ্গে কাজ করেন, তিনি জানান, অনেক সময় মামলার তদন্তকারীরা নারীদের অভিযোগকে গুরুত্ব দেন না। এমনকি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করারও অভিযোগ পাওয়া যায়।
মেক্সিকোতে নারীদের প্রতি সহিংসতার পেছনে গভীর সাংস্কৃতিক কারণ রয়েছে। সমাজে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এবং লিঙ্গগত বৈষম্য এর অন্যতম কারণ।
অনেক সময় দেখা যায়, বিচার ব্যবস্থায় নারীদের প্রতি সহানুভূতি ও পেশাদারিত্বের অভাব থাকে।
মেক্সিকোর নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার এবং সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। নারীদের জন্য নিরাপদ যাতায়াতের ব্যবস্থা করা, যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস