যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছেন বহু পরিবারের পোষ্যরা। সেখানকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা প্রকল্প ‘সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিস্টেন্স প্রোগ্রাম’ (স্ন্যাপ)-এর অর্থ ছাড় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। এর ফলে অনেক পরিবারে একদিকে যেমন নিজেদের খাবার জোগানো কঠিন হয়ে পড়েছে, তেমনই তাদের প্রিয় পোষ্যদের খাবার দেওয়াটাও দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খবরটি জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অচলাবস্থার কারণে স্ন্যাপের অর্থ ছাড়ের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে, যা দেশটির ইতিহাসে দীর্ঘতম সময় ধরে চলা একটি ঘটনা। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে সেইসব পরিবারের উপর, যারা এই খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। অনেকেই বলছেন, নিজেদের খাবার কেনার টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে পোষ্যদের খাবার কিনে খাওয়ানো তাদের জন্য রীতিমতো দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকে তাদের প্রিয় কুকুর, বিড়ালদের আশ্রয়কেন্দ্রে (shelter) রেখে আসার কথা ভাবছেন।
ইলিনয়ের বাসিন্দা সারা লুংউইজ নামের এক নারী জানিয়েছেন, তিনি তাঁর দুই মেয়ের খাবারের পাশাপাশি, তাঁর বিড়াল ও দুটি কুকুরের খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। অবশেষে একটি স্থানীয় অলাভজনক সংস্থার সহায়তায় তিনি আপাতত কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন, যারা তাঁকে ও তাঁর পোষ্যদের জন্য খাবার কেনার উদ্দেশ্যে একটি উপহার কার্ড দিয়েছে।
বিষয়টি শুধু লুংউইজের একার নয়। আমেরিকাজুড়ে বহু মানুষ এই সমস্যায় জর্জরিত। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে, অনেক আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখন পোষ্যদের ফিরিয়ে দেওয়ার সংখ্যা বাড়ছে।
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াচ্ছে। মিশৌরির একটি খাদ্য বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তা কিম বাকম্যান জানিয়েছেন, অনেক মানুষ তাদের নিজেদের চেয়ে পোষ্যদের খাওয়াতে বেশি আগ্রহী।
এই সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পশু খাদ্য সংগ্রহ করছে। অনেকে আবার আর্থিক অনুদান দিতে এগিয়ে আসছেন। কেউ কেউ পোষ্যদের খাবার তৈরির জন্য খাদ্য বিষয়ক পরামর্শ দিচ্ছেন, যাতে খাদ্য সংকট কিছুটা কমানো যায়। মাসাচুসেটসের একটি প্রাণী অধিকার সংস্থা তাদের ফেসবুক পেজে সাহায্যের আবেদন জানালে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন।
টেনেসির একটি আশ্রয়কেন্দ্রে অক্টোবর মাসে খাদ্য সহায়তা চেয়ে আসা পরিবারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সাধারণত, যেখানে মাসে ৭৫ থেকে ১০০টি পরিবারের জন্য খাবারের প্রয়োজন হয়, সেখানে অক্টোবরে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫-এ। নিউ অরলিন্সের একটি আশ্রয়কেন্দ্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২০ বছরে তাঁরা এত বেশি খাদ্য সহায়তার আবেদন দেখেননি।
অর্থনৈতিক এই কঠিন পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট স্ন্যাপ প্রকল্পের তহবিল বিষয়ক একটি মামলার শুনানিতে হস্তক্ষেপ করেছে। তবে এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস