গভীর শোক আর মানসিক আঘাত থেকে মুক্তি পেতে বক্সিংকে বেছে নিয়েছিলেন আনা হুইটহ্যাম। মায়ের মৃত্যুর পর জীবনে আসা গভীর ক্ষতগুলো সারানোর পথ খুঁজেছিলেন তিনি, আর সেই পথ খুলে দেয় বক্সিং।
সম্প্রতি প্রকাশিত তার ‘সফট টিস্যু ড্যামেজ’ (Soft Tissue Damage) বইটিতে নিজের এই লড়াইয়ের কথাই তুলে ধরেছেন তিনি।
কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মা’কে হারান আনা। মায়ের অসুস্থতা ও মৃত্যুর সময়ে তিনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।
সেই শোক আর কষ্টের তীব্রতা থেকে মুক্তি পেতে এক ভিন্ন পথ বেছে নেন, যা তাকে শক্ত করে তোলে—বক্সিং। খেলাটি তাকে কেবল শারীরিক শক্তিই দেয়নি, বরং রাগ, দুঃখ এবং অতীতের আঘাতগুলো থেকে বেরিয়ে আসার সাহস জুগিয়েছিল।
আনা হুইটহ্যামের অতীতের জীবন খুব সহজ ছিল না। কৈশোরে বিদ্যালয়ে অনিয়মিত ছিলেন, মাদকাসক্তও হয়েছিলেন।
আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে নিজেকে বাঁচাতে একাধিকবার চেষ্টা করেছেন। সেই সময়ে পাশে ছিলেন মা।
মায়ের ভালোবাসা, ধৈর্য্য আর সাহস জুগিয়ে যাওয়ার গল্পও উঠে এসেছে তার লেখায়। মা সবসময় মেয়ের পাশে থেকেছেন, গভীর রাতেও মেয়ের হাত ধরে থেকেছেন যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি শান্ত হয়েছেন।
বক্সিংয়ের জগতে আসার আগে আনা সবসময় নিজেকে দুর্বল মনে করতেন। সমাজের চোখে আকর্ষণীয় হওয়ার এক অদম্য চেষ্টা ছিল তার মধ্যে।
নিজেকে অন্যদের কাছে প্রমাণ করার এক ধরণের তাড়না কাজ করত সবসময়। কিন্তু বক্সিং তার এই ধারণা পাল্টে দেয়।
খেলাটি তাকে নতুনভাবে নিজের শরীরকে অনুভব করতে শিখিয়েছে। আঘাত আর ক্ষতগুলো তার কাছে এখন দুর্বলতার প্রতীক নয়, বরং এক নতুন শক্তির উৎস।
বক্সিংয়ের রিংয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করাটা যেন এক ধরণের থেরাপি ছিল তার জন্য। আঘাত পেলেও তিনি জানতেন, এই আঘাতই তাকে সুস্থ করে তুলবে।
এই বিশ্বাস তাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। তিনি মনে করেন, বক্সিংয়ের অভিজ্ঞতা তাকে নিজের ভেতরের শক্তিকে খুঁজে পেতে সহায়তা করেছে।
বর্তমানে আনা হুইটহ্যাম বক্সিং থেকে দূরে সরে এসেছেন। তবে খেলাটি তার জীবনে যে পরিবর্তন এনেছে, তা তিনি সবসময় অনুভব করেন।
তিনি এখন তার মেয়ের জন্য একটি সুন্দর জীবন তৈরি করতে চান। মেয়েকে নিয়ে তার নতুন স্বপ্ন, নতুন পথচলা শুরু হয়েছে।
আনা হুইটহ্যামের ‘সফট টিস্যু ড্যামেজ’ বইটি আগামী ২৭শে মার্চ প্রকাশিত হয়েছে।
বইটির দাম ১৪.৯৯ পাউন্ড, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২,১০০ টাকার সমান।
বইটি প্রকাশ করেছে ‘রাফ ট্রেড’ (Rough Trade)।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান