গোপন কথা: ভালোবাসার কারণ, সিনেমা থেকে পডকাস্ট, সবার মনে!

গল্পের জগৎ আর বাস্তবতার আনাচে কানাচে: কেন আমরা সবাই গসিপ ভালোবাসি

গসিপ বা পরচর্চা, মানুষের আলোচনা-পর্যালোচনার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আদিম সমাজ থেকে শুরু করে আধুনিক ডিজিটাল যুগ পর্যন্ত, মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগের এই ধারাটি বিদ্যমান।

বিভিন্ন টেলিভিশন সিরিয়াল, পডকাস্ট, বই এমনকি সামাজিক আলোচনাতেও এর সরব উপস্থিতি লক্ষণীয়। সম্প্রতি, “হোয়াইট লোটাস” (The White Lotus) এর মতো জনপ্রিয় সিরিজে বন্ধুদের মধ্যে গোপন আলোচনা, “ব্রিজারটন” (Bridgerton)-এর মতো সিরিজে গোপন প্রেমের গুঞ্জন, অথবা “গসিপ গার্ল”-এর মতো কিশোর নাটকে সম্পর্কের জটিলতা—গসিপের নানা রূপ ফুটে উঠেছে।

গসিপের প্রতি মানুষের এই আগ্রহের কারণ কী? মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো বিবর্তনীয় মনস্তত্ত্ব। ভাষার উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ একে অপরের সম্পর্কে জানতে চেয়েছে, তথ্য আদান-প্রদান করতে চেয়েছে।

কে ভালো, কে খারাপ, কার সম্পর্কে কী জানা যায়—এই ধরনের আলোচনা মানুষের সামাজিক সম্পর্ককে দৃঢ় করতে সাহায্য করে। গসিপ সেই অর্থে এক ধরনের জ্ঞান।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টমিনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. ক্যাথরিন ওয়াডিংটন বলেন, “গসিপ হল মূল্যায়নের বিষয়। এখানে ভালো-মন্দ, সঠিক-ভুল—এসবের বিচার থাকে।”

নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে গসিপ করার ধরন কিছুটা ভিন্ন হতে দেখা যায়। নারীরা সরাসরি গসিপ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তবে পুরুষরা সাধারণত “আমি গসিপ করি না, তবে…” এই ধরনের বাক্য ব্যবহার করেন।

গসিপের অন্য একটি দিক হলো, এর মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদান হয়। বিনোদন জগতের গোপন খবর হোক বা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের গল্প, গসিপ আমাদের কৌতূহল মেটায়।

“দ্য রেস্ট ইজ এন্টারটেইনমেন্ট” (The Rest is Entertainment) নামের একটি জনপ্রিয় পডকাস্ট প্রতি মাসে প্রায় ৪৫ লক্ষ বার ডাউনলোড হয়। এই পডকাস্টে বিনোদন জগতের ভেতরের খবর পরিবেশন করা হয়।

তবে, গসিপের ভালো ও খারাপ দিক দুটোই রয়েছে। কারো সম্পর্কে গুজব ছড়ানো যেমন ক্ষতিকর হতে পারে, তেমনি সমাজে ঘটে যাওয়া অন্যায় বা ভুল কাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতেও এটি সাহায্য করতে পারে।

#MeToo আন্দোলনের সময় গসিপ নারীদের জন্য সুরক্ষার একটি উপায় হিসেবে কাজ করেছিল।

গসিপ নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি বা মিডিয়াগুলিকে দায়িত্বশীল হতে হয়। ব্যক্তিগত বিদ্বেষ থেকে কোনো কথা উঠছে কিনা, অথবা এর মাধ্যমে কারো সম্মানহানি হচ্ছে কিনা, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

গসিপ সবসময় খারাপ নয়। সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে এর জুড়ি নেই। আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা করা, অন্যদের সম্পর্কে জানতে চাওয়া—এগুলো সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়ায়।

তাই গসিপ একদিকে যেমন কৌতূহল মেটায়, তেমনি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশও বটে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *