ব্রিটিশ লেখিকা রয়সিন ল্যানিগান: ভুতুড়ে বাড়ির গল্পে আধুনিক জীবনের সংকট।
ব্রিটিশ লেখিকা রয়সিন ল্যানিগান-এর প্রথম উপন্যাস ‘আই ওয়ান্ট টু গো হোম বাট আই’ম অলরেডি দেয়ার’ (I Want to Go Home But I’m Already There) -এ উঠে এসেছে আধুনিক জীবনের সংকট, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের অনিশ্চয়তা এবং ভাড়ার বাড়িতে বসবাসের সমস্যা। গল্পের প্রেক্ষাপট ভুতুড়ে বাড়ি হলেও, এর গভীরে রয়েছে বর্তমান সমাজের প্রতিচ্ছবি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজের এই উপন্যাস এবং জীবন সম্পর্কে নানা কথা বলেছেন রয়সিন।
রয়সিন ল্যানিগান বেড়ে উঠেছেন বেলফাস্টে, পড়াশোনা করেছেন কুইন’স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্টে। বর্তমানে তিনি লন্ডনে বসবাস করেন এবং সাংবাদিকতা করেন।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করছেন। তার নতুন উপন্যাসটি মূলত ভাড়ার বাড়িতে থাকা এক দম্পতির গল্প নিয়ে, যারা নানা প্রতিকূলতার শিকার।
এই উপন্যাসে রয়সিন জীবনের কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন, যা পাঠককে নাড়া দেয়।
উপন্যাসটি লেখার পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রয়সিন জানান, মহামারীর সময় তিনি বেলফাস্ট থেকে লন্ডনে ফিরে আসেন এবং সেখানকার ভাড়ার বাজারের সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হন।
তিনি বলেন, “তখন বাড়িওয়ালা দ্রুত ভাড়া দিতে চাইত, তাই দাম তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তবে কয়েক মাস পর পরিস্থিতি কঠিন হয়ে যায়।” লন্ডনে বসবাসের দশ বছরে তিনি ভাড়ার বাজারের নানা দিক প্রত্যক্ষ করেছেন, যা তার উপন্যাসের বিষয়বস্তু তৈরিতে সাহায্য করেছে।
রয়সিন জানান, ভয়ের গল্পগুলোতে সাধারণত নারীদের দুর্বল এবং আত্মত্যাগী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যা তাকে বিরক্ত করত।
তিনি এমন চরিত্র তৈরি করতে চেয়েছেন, যাদের মধ্যে সমাজের অন্য নারীদের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। উপন্যাসের সংলাপগুলো বাস্তবসম্মত করার জন্য তিনি প্রায়ই মানুষের কথা রেকর্ড করে রাখতেন।
লন্ডনের ভাড়ার বাজারের সংকট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রয়সিন ভাড়া নিয়ন্ত্রণের আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি মনে করেন, বাড়িওয়ালাদের অতিরিক্ত ক্ষমতা এবং পর্যাপ্ত আবাসনের অভাব এই সমস্যার মূল কারণ।
এছাড়াও, সম্পত্তি কেনাবেচা এবং ভাড়া দেওয়াকে অনেকে স্বাভাবিক পেশা হিসেবে গ্রহণ করে, যা একটি অসুস্থ সংস্কৃতির লক্ষণ বলে তিনি মনে করেন।
উপন্যাসটি লিখতে গিয়ে রয়সিন সুসান্না ডিকির ‘কমন ডিসেন্সি’, ওসীন ম্যাকেনার ‘ইভিনিংস অ্যান্ড উইকেন্ডস’ এর মতো বইগুলো থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন।
তার পছন্দের ভয়ের গল্পের মধ্যে রয়েছে ডেইজি জনসনের ‘সিস্টার্স’ এবং শার্লট পারকিন্স গিলম্যানের ‘দ্য ইয়েলো ওয়ালপেপার’।
বর্তমানে রয়সিন ‘রিজেকশন’ (Rejection) নামে একটি বই লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যেখানে তিনি সমাজের একাকী এবং হতাশ পুরুষদের জীবন নিয়ে কাজ করবেন।
এছাড়াও, সাংবাদিকতার জগৎ এবং অপরাধের সম্পর্ক নিয়েও তার কাজ করার আগ্রহ রয়েছে।
রয়সিনের উপন্যাসটি বর্তমানে অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে এবং এর দাম প্রায় ১ হাজার ৮০০ টাকার কাছাকাছি।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান