প্রেমের এক অসাধারণ গল্প, যা বন্ধুত্ব থেকে শুরু হয়ে ভালোবাসার গভীর বন্ধনে পৌঁছেছিল। গল্পের শুরুটা ১৯৯২ সালে, যখন মেগান নামের এক তরুণী অস্ট্রেলিয়ার একটি বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি হয়।
ক্যানবেরা থেকে আসা মেগান সেখানে সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে, অচেনা মানুষের মাঝে নিজেকে খুঁজে পায়। ১৪ জন মেয়ের সাথে একটি কুঁড়েঘরে তার দিন কাটতে শুরু করে, যেখানে শীত থেকে বাঁচতে কাঠ কাটতে হতো, গরম জলের জন্য অপেক্ষা করতে হতো।
পাহাড় ট্রেকিং এবং স্কিইংয়ের মতো কঠিন কাজগুলো করতে গিয়ে মেগান ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে এবং কিছু দারুণ বন্ধু তৈরি করে। তাদের মধ্যে একজন ছিল গাই, যে ছিল তার ফ্রেঞ্চ ক্লাসের সহপাঠী।
গাই ছিল খুবই হাসিখুশি, আন্তরিক এবং মজাদার একজন মানুষ। তাদের মধ্যে খুনসুটি চলত, একে অপরের জিনিস লুকানো বা কেড়ে নেওয়ার মতো খেলা চলত, এমনকি রাতের খাবারে তারা মজার চিঠি আদান-প্রদান করত।
বোর্ডিং স্কুলের জীবন মেগানের ভালো লাগলেও তার বাবা-মা এতে রাজি ছিলেন না। তাই পরের বছর তাকে ক্যানবেরায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়। গাই এবং মেগান তাদের যোগাযোগ বজায় রাখে, ফোনে কথা হতো, গানের ক্যাসেট চালাচালি হতো।
এমনকি তারা একসাথে স্কিইংয়ের জন্য ছুটি কাটাতে গিয়েছিল, যা এখন ভাবলে মেগান বিশ্বাস করতে পারে না যে কিভাবে এটি সম্ভব হয়েছিল।
গাই ছিল হংকং থেকে আসা একজন ব্রিটিশ, যে স্কুল জীবনের পর ইংল্যান্ডে ফিরে যায়। কিন্তু তারা বিভিন্ন সময়ে দেখা করত, একসঙ্গে ঘুরে বেড়াত, এবং হাসাহাসি করত।
একবার মেগান গাইকে সরাসরি প্রস্তাব দেয়, “আমাকে বিয়ে করো, নয়তো আমার সাথে আর কখনো দেখা করো না।” আর তখনই গাই হাঁটু গেড়ে বসে!
তাদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া ছিল, তবে কিছু ক্ষেত্রে সময়টা অনুকূলে ছিল না। মেগান যখন ১৮ বছর বয়সে অন্য একজনের সাথে সম্পর্কে জড়ায়, তখন গাইয়ের সাথে তার প্রেমটা আর হয়ে ওঠেনি। কিন্তু গাই সবসময় তার ভালো বন্ধু ছিল।
২০০১ সালে মেগান তার প্রেমিকের সাথে থাকার জন্য যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমায়। তার কাছে ছিল মাত্র ৩০০ ডলার, যা সেই সময়ের হিসেবে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৬ হাজার টাকার মতো।
লন্ডনে কিছু টাকা জমিয়ে স্কটল্যান্ডে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। লন্ডনে আসার দ্বিতীয় রাতে, একটি পাব-এ গাইয়ের সাথে তার দেখা হয়।
গাই তাকে জড়িয়ে ধরে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানায়। সেদিন সে একটি ইন্টারভিউ দিয়ে সরাসরি সেখানে এসেছিল। তারা একসঙ্গে পান করে, নাচে এবং গভীর রাত পর্যন্ত গল্প করে।
এর কয়েকদিন পর, মেগান যখন জানতে পারে যে তার প্রেমিক স্কটল্যান্ডে তাকে চায় না, তখন সে গাইকে কিছুই না জানিয়ে সম্পর্ক ভেঙে দেয়।
কিছুদিন পর, মেগানের বোন অস্ট্রেলিয়া দিবস উপলক্ষে লন্ডনে একটি পার্টি আয়োজন করে। সেখানে গাইয়ের সাথে তার আবার দেখা হয়।
তারা একসাথে বসে অনেক কথা বলে এবং হাতে হাত রাখে। এরপর তাদের সম্পর্কের শুরু হয়।
তাদের প্রথম ডেটিংয়ের জন্য গন্তব্য ছিল ভেনিস। কিন্তু গাই কিছুটা দেরিতে আসায় মেগান বেশ বিরক্ত ছিল। তবে ট্রেনের যাত্রা শুরু হওয়ার পরেই গাই জানায় যে তারা ভেনিসে যাচ্ছে।
এরপর তাদের জীবনে আসে অনেক আনন্দ, একসঙ্গে পথচলা এবং ভালোবাসার নতুন দিগন্ত। তাদের ভালোবাসার এই দীর্ঘ পথচলায় তারা একসঙ্গে অনেক কঠিন সময় পার করেছে, আবার হাসিখুশি মুহূর্তগুলোও উপভোগ করেছে।
২০ বছর পর, তাদের দাম্পত্য জীবন পরিপূর্ণতা লাভ করে এবং তারা তিনটি সন্তানের জন্ম দেয়। মেগান সবসময় গাইয়ের মধ্যে জীবনের আসল গুরুত্ব খুঁজে পায়।
তাদের এই পথচলার মূল মন্ত্র ছিল আনন্দ, দয়া এবং ভালোবাসার উদযাপন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান