ফিলিস্তিনের বাবার ‘মানব ঢাল’ হওয়ার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা!

গাজা শহর: ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়ে গাজার একটি পরিবারের বিভীষিকাময় দিনগুলোর একটি হৃদয়বিদারক চিত্র সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। হামাদ স্কুলে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনের বাসিন্দা ইউসুফ আল-মাসরি জানিয়েছেন, কিভাবে ইসরায়েলি সেনারা তাদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।

গত ১৯শে অক্টোবর, উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া এলাকার হামাদ স্কুলে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। সেসময় স্কুলের চারপাশে ট্যাংক পরিবেষ্টিত ছিল এবং কোয়াডকপ্টার থেকে বাসিন্দাদের বের হয়ে আসার জন্য ঘোষণা দেওয়া হচ্ছিল। ইউসুফের স্ত্রী, ৩০ বছর বয়সী আমাল আল-মাসরি, জানান, তাদের পরিবারসহ শত শত মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল। গোলাবর্ষণের কারণে তারা চরম আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন।

ভোরবেলা, কোয়াডকপ্টারের মাধ্যমে আরবি ভাষায় ঘোষণা করা হয়, প্রত্যেককে তাদের পরিচয়পত্র ও হাত উপরে তুলে স্কুল থেকে বের হতে হবে। এরপর সেনারা পুরুষদের স্কুলের গেটে এবং নারী ও শিশুদের স্কুলের উঠানে জড়ো করে। ইউসুফ জানান, ১৪ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের সারিবদ্ধভাবে ক্যামেরার সামনে যেতে বাধ্য করা হয়, যা সম্ভবত মুখের আদল শনাক্ত করার প্রযুক্তি ব্যবহার করছিল। এরপর অনেককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

ইউসুফকে একটি গর্তে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করা হয়, যেখানে প্রায় একশ জনের মতো পুরুষকে সারাদিন রাখা হয়েছিল। সেনারা সেখানে গুলি চালাচ্ছিল, শব্দ বোমা নিক্ষেপ করছিল এবং অনেককে মারধর ও নির্যাতন করছিল। তিনি জানান, সারাক্ষণ তিনি তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তার স্ত্রী ঘটনার এক সপ্তাহ আগেই একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন।

সন্ধ্যায়, ইউসুফসহ কয়েকজনকে একটি অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের ইসরায়েলি সেনাদের কিছু কাজে সাহায্য করতে বলা হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন কাছাকাছি স্কুলের আশ্রয় নেওয়া আরও দুইজন ফিলিস্তিনি। এরপর সেনাদের নির্দেশে ইউসুফকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সৈন্যদের আগে তাকে বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করতে হতো, এরপর সেনারা সেখানে প্রবেশ করে তল্লাশি চালাত এবং পরবর্তীতে ভবনগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিত।

একদিন, ইউসুফকে অন্য একজনের সাথে একটি হাসপাতালে বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের জন্য পাঠানো হয়। এসময় তিনি পালানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু সৈন্যদের হাতে ধরা পড়েন এবং বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে, আমাল তার সন্তানদের নিয়ে গাজা সিটির আল-নাসর এলাকার নিউ গাজা স্কুলে আশ্রয় নেন। পরে তিনি জানতে পারেন, ইউসুফ আল-আহলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি সেখানে ছুটে যান এবং তাদের মধ্যে আবার দেখা হয়।

বর্তমানে ইউসুফ, আমাল এবং তাদের সন্তানরা সবাই একসাথে আছেন। হাসপাতালের ১৩টি সেলাইয়ের পর ইউসুফ ধীরে ধীরে হাঁটতে পারছেন। তবে ইউসুফের বাবা জামিল ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের নবজাতক কন্যার নাম রাখা হয়েছে সুমৌদ, যার অর্থ ‘দৃঢ়তা’, যা তাদের টিকে থাকার প্রতীক।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *