আতঙ্কের রাত: নাইটক্লাবে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষের আর্তনাদ!

বিশ্বজুড়ে নাইটক্লাব এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রায়ই মারাত্মক রূপ নেয়। সম্প্রতি উত্তর মেসিডোনিয়ার কোকানি শহরে একটি নাইটক্লাবে অগ্নিকাণ্ডে ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১০০ জন।

এই ধরনের ঘটনাগুলি আবারও মনে করিয়ে দেয় বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা কতটা জরুরি। নিচে এমন কিছু ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরা হলো:

  • এপ্রিল ২০২৪: তুরস্কের ইস্তাম্বুলে মাসক্যারেড নাইটক্লাবে সংস্কার কাজ চলার সময় আগুন লাগে। এতে ২৯ জন শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। ক্লাবটি একটি ১৬ তলা আবাসিক ভবনের নিচতলায় অবস্থিত ছিল।
  • অক্টোবর ২০২৩: স্পেনের মুরসিয়া শহরের একটি নাইটক্লাবে আগুন লাগে, যা দ্রুত পার্শ্ববর্তী আরও দুটি ক্লাবে ছড়িয়ে পরে। এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটে।
  • জানুয়ারি ২০২২: ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম পাপুয়া প্রদেশের সোরং শহরে দুটি দলের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে একটি নাইটক্লাবে আগুন লাগে। এতে ১৯ জন নিহত হয়।
  • জানুয়ারি ২০২২: ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়াউন্ডের লিভস নাইটক্লাবে বিস্ফোরণের ফলে ১৭ জন নিহত হয়। ধারণা করা হয়, আতশবাজি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং পরে তা রান্নার গ্যাসের মজুত স্থানে ছড়িয়ে পরে।
  • ডিসেম্বর ২০১৬: যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে “ঘোস্ট শিপ” নামে পরিচিত একটি গুদামে আগুন লাগে। এটি মূলত শিল্পীদের বসবাসের স্থান এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হতো। ইলেকট্রনিক মিউজিক ও নাচের একটি পার্টির সময় আগুন লাগলে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়।
  • অক্টোবর ২০১৫: রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টের কোলেকটিভ নাইটক্লাবে একটি রক কনসার্টের সময় আতশবাজি প্রদর্শনের কারণে আগুন লাগে। এতে ৬৪ জন নিহত এবং প্রায় ১৯০ জন আহত হয়।
  • জানুয়ারি ২০১৩: ব্রাজিলের সান্তা মারিয়া শহরের কিস নাইটক্লাবে আগুন লেগে ২০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। তদন্তে জানা যায়, সিলিংয়ের শব্দ নিরোধক ফোমে আগুন ধরে যায় এবং তা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসে দমবন্ধ হয়ে এতোগুলো মানুষের মৃত্যু হয়।
  • ডিসেম্বর ২০০৯: রাশিয়ার পার্ম শহরে লাম হর্স নাইটক্লাবে ইনডোর ফায়ারওয়ার্কস প্রদর্শনের সময় আগুন লাগে। প্লাস্টিকের সিলিংয়ে আগুন লেগে ১৫২ জনের মৃত্যু হয়।
  • জানুয়ারি ২০০৯: থাইল্যান্ডের ব্যাংককের সানতিকা ক্লাবে ইংরেজি নববর্ষের কাউন্টডাউনের পর ইনডোর ফায়ারওয়ার্কস প্রদর্শনের সময় আগুন লাগে। এতে ৬৭ জন নিহত এবং অনেকে আহত হয়।
  • সেপ্টেম্বর ২০০৮: চীনের শেনজেনে কিং অফ ড্যানসার্স নাইটক্লাবে আতশবাজি প্রদর্শনের পর হুড়োহুড়ি লেগে আগুন ধরে যায়। এতে ৪৪ জন নিহত হয়।
  • ডিসেম্বর ২০০৪: আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে ক্রোম্যাগনন রিপাবলিক ক্লাবে একটি ফ্লেয়ার থেকে সিলিংয়ের ফোমে আগুন লাগে। এই অগ্নিকাণ্ডে ১৯৪ জন নিহত হয়। ক্লাব মালিক ওমর চাবানকে এই ঘটনার জন্য ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
  • ফেব্রুয়ারি ২০০৩: যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ডের ওয়েস্ট ওয়ারউইকের স্টেশন নাইটক্লাবে একটি ব্যান্ড দলের আতশবাজি ব্যবহারের কারণে আগুন লাগে। এতে ১০০ জন নিহত এবং ২০০ জনের বেশি আহত হয়।
  • ডিসেম্বর ২০০০: চীনের ল্যুয়াং শহরে একটি ডিস্কোতে ওয়েল্ডিংয়ের কারণে আগুন লেগে ৩০৯ জনের মৃত্যু হয়।
  • অক্টোবর ১৯৯৮: সুইডেনের গ্যোটেবার্গ শহরে একটি যুব ডিস্কোতে অগ্নিসংযোগের ফলে ৬৩ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জন আহত হয়।
  • মার্চ ১৯৯৬: ফিলিপাইনের কুয়েজন সিটির ওজোন ডিস্কো পাব-এ আগুন লেগে ১৬২ জন নিহত হয়। নিহতদের অধিকাংশই ছিল শিক্ষার্থী, যারা তাদের শিক্ষা বর্ষ শেষের পার্টিতে অংশ নিয়েছিল।
  • মার্চ ১৯৯০: নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কস বরোতে হ্যাপি ল্যান্ড নাইটক্লাবে এক ব্যক্তির অগ্নিসংযোগের ফলে ৮৭ জন নিহত হয়। ওই ব্যক্তি তার প্রেমিকার উপর রাগ করে ক্লাবের একমাত্র দরজায় পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং গেট আটকে দেয়, যার ফলে ভেতরে থাকা লোকজন আটকা পরে।
  • ডিসেম্বর ১৯৮৩: স্পেনের মাদ্রিদের আলকালা ড্যান্স হলে আগুন লেগে ৭৮ জন নিহত এবং ২০ জনের বেশি আহত হয়।
  • মে ১৯৭৭: কেনটাকি’র সাউথগেটের বেভারলি হিলস সাপার ক্লাবে আগুন লেগে ১৬৫ জন নিহত এবং ২০০ জনের বেশি আহত হয়।
  • নভেম্বর ১৯৪২: যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ নাইটক্লাবের অগ্নিকাণ্ডটি ঘটে বোস্টনের কোকোনাট গ্রোভ ক্লাবে। এতে ৪৯২ জন নিহত হয়।
  • এপ্রিল ১৯৪০: মিসিসিপির ন্যাচেজের রিদম নাইট ক্লাবে সিলিংয়ে থাকা স্প্যানিশ মস-এ আগুন লাগে। এতে ২০৯ জন নিহত হয়।

এই ঘটনাগুলো থেকে বোঝা যায়, নাইটক্লাব ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি অনেক বেশি। বাংলাদেশেও এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটে থাকে।

জনবহুল স্থানগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত মহড়া, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের পর্যাপ্ত ব্যবহার এবং জরুরি নির্গমনের ব্যবস্থা রাখা অত্যন্ত জরুরি।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *