মন্টানার গরুর রাজ্যে ভোজনরসিকের অভিযান: সেরা স্টেক আবিষ্কার!

মন্টানার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে গরুর মাংসের স্বাদ: এক খাদ্য-অভিযান

যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা অঙ্গরাজ্যের সবুজ ঘাসযুক্ত প্রান্তরে গরু পালন একটি ঐতিহাসিক ঐতিহ্য। এখানকার ভূমি যেন বিশাল আকাশের নীচে বিস্তৃত, যেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গবাদি পশু পালন করা হয়। সম্প্রতি, এই অঞ্চলের খাদ্য সংস্কৃতি এবং গরুর মাংসের স্বাদ নিতে একটি ভ্রমণ করেন এক খাদ্যরসিক।

ভ্রমণের শুরুতে, তিনি মন্টানার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি পাথুরে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে প্রকৃতির বিশালতা অনুভব করেন। আদিবাসী আমেরিকান উপজাতিরা একসময় এই স্থান থেকে বাইসন শিকার করত। এখানকার ‘ফার্স্ট পিপলস বাফেলো জাম্প স্টেট পার্ক’-এর ম্যানেজার ক্লার্ক কার্লসন-থম্পসন জানান, এখানকার গভীর খাদে বাইসন শিকারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই স্থানটি ছিল যেন এক বিশাল উন্মুক্ত জাদুঘর, যেখানে প্রকৃতির ইতিহাস আজও জীবন্ত।

এরপর ভ্রমণকারী, ‘বিফ এন বোন স্টেকহাউস’-এ যান, যেখানে মন্টানার গরুর মাংস ও বাইসনের মাংস পরিবেশন করা হয়। বাইসনের মাংসে গরুর মাংসের চেয়ে কম চর্বি থাকে, তবে স্বাদ তেমন আকর্ষণীয় ছিল না। এরপর তিনি মন্টানার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারেন, যেখানে গরুর মাংস ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। উনিশ শতকের শেষ দিকে বসতি স্থাপনকারীরা বাইসনের পরিবর্তে গরু পালন শুরু করে, যা বাজারজাত করা সহজ ছিল। এই সময় গরুর মাংস ব্যবসায়ীরা সোনা ও তাম্রখনি শ্রমিক এবং কাঠ কাটার শ্রমিকদের খাদ্য সরবরাহ করত।

পরবর্তী গন্তব্য ছিল ফোর্ট বেনটন। এখানে তিনি ‘গ্রান্ড ইউনিয়ন হোটেল’-এ ওঠেন, যা উনিশ শতকের মন্টানার ইতিহাসের একটি অংশ। ১৮৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হোটেলটি একসময় ঘোড়সওয়ার এবং মিসৌরি নদীতে স্টিমবোটে আসা খনি শ্রমিকদের আকর্ষণ করত। পরবর্তীতে, তিনি বুট শহরে যান, যেখানে কনরাড কোহর্স নামের এক জার্মান ব্যবসায়ী গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেন। কোহর্স পরবর্তীতে ডিয়ার লজ ভ্যালিতে একটি বিশাল খামার কিনে নেন, যেখানে তিনি প্রচুর পরিমাণে গরু পালন করতেন।

ভ্রমণকালে তিনি ‘ক্যাসাগ্রান্ডাস স্টেকহাউস’-এ যান, যেখানে রকি মাউন্টেন অঞ্চলের গরুর মাংস দিয়ে তৈরি চমৎকার ‘রিব আই’ স্টেক পরিবেশন করা হয়। এরপর তিনি ‘গ্রান্ট-কোহর্স র‍্যাঞ্চ ন্যাশনাল হিস্টোরিক সাইট’-এ যান, যেখানে উনিশ শতকের কায়দায় একটি কার্যকরী গবাদি পশু খামার রয়েছে। এখানে গরুর মাংসের উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।

বর্তমানে, মন্টানায় বিশাল আকারের খামারগুলোতে এখনো ঐতিহ্যবাহী উপায়ে গবাদি পশু পালন করা হয়। এই অঞ্চলের অনেক ছোট পরিবার তাদের খামার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। হেলেনাতে, তিনি ওল্ড সল্ট কো-অপারেটিভ-এর প্রতিষ্ঠাতা কোলের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই কো-অপারেটিভ স্থানীয় খামার থেকে গরুর মাংস সংগ্রহ করে এবং নিজস্ব রেস্টুরেন্টে বিক্রি করে। তিনি জানান, মহামারীর কারণে মাংস প্রক্রিয়াকরণ ব্যাহত হওয়ায় তারা সরাসরি ভোক্তাদের কাছে মাংস বিক্রি শুরু করেন। এখানকার রেস্টুরেন্টগুলোতে স্থানীয় খামারের ঘাস খাওয়ানো গরুর মাংস দিয়ে তৈরি বার্গার পাওয়া যায়।

ভ্রমণের শেষে, তিনি ‘ইউনিয়ন’ নামের একটি আধুনিক রেস্টুরেন্টে যান, যেখানে বিভিন্ন ধরনের গরুর মাংস পাওয়া যায়। সেখানে তিনি ‘রিব আই’ স্টেক অর্ডার করেন, যা ছিল অত্যন্ত সুস্বাদু। মন্টানার এই খাদ্য-অভিযান স্থানীয় সংস্কৃতি এবং গরুর মাংসের এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে।

তথ্য সূত্র: ট্র্যাভেল অ্যান্ড লিভিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *