সুইজারল্যান্ডের মনোমুগ্ধকর ট্রেন যাত্রা: স্বপ্নীল সৌন্দর্যের দেশ।
সুইজারল্যান্ড, আল্পস পর্বতমালার কোলে অবস্থিত, যেন এক রূপকথার দেশ। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং অত্যাধুনিক জীবনযাত্রা যে কারো মন জয় করে নেয়।
সম্প্রতি, সুইস গ্র্যান্ড ট্রেন ট্যুর (Swiss Grand Train Tour) নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে সুইজারল্যান্ডের মনোমুগ্ধকর ট্রেন যাত্রার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা হয়েছে। এই ট্রেন ভ্রমণ যেন এক স্বপ্নীল জগৎ-এর হাতছানি।
সুইজারল্যান্ডে ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ হলো এখানকার অত্যাধুনিক এবং সময়ানুবর্তী ট্রেন ব্যবস্থা। সুইস ট্রাভেল পাস (Swiss Travel Pass) ব্যবহার করে আপনি অনায়াসে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভ্রমণ করতে পারেন।
এই পাস ব্যবহার করে ট্রেন, বাস এবং নৌকায় অলিমিটেড ভ্রমণের সুযোগ থাকে। তাছাড়াও, বিভিন্ন জাদুঘরে বিনামূল্যে প্রবেশের সুবিধা পাওয়া যায়। এই পাস এর মাধ্যমে ভ্রমণ সত্যিই অনেক সহজ হয়ে যায়।
সুইজারল্যান্ডের এই ট্রেন ভ্রমণ শুরু হয় মন্ট্রেক্স শহর থেকে। লেক জেনিভার তীরে অবস্থিত চিলন ক্যাসল (Château de Chillon) – ইউরোপের সবচেয়ে বড় দুর্গগুলোর মধ্যে অন্যতম।
একাদশ শতাব্দীতে নির্মিত এই দুর্গটি পর্যটকদের কাছে আজও জনপ্রিয়। এরপর, বিশ্বখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ফ্রেডি মার্কারির স্মৃতিবিজড়িত মন্ট্রেক্স শহরটি ঘুরে আসা যেতে পারে।
কুইন ব্যান্ডের এই কিংবদন্তি শিল্পী জীবনের অনেকটা সময় এখানে কাটিয়েছেন।
মন্ট্রেক্স থেকে স্পিয়েজ পর্যন্ত গোল্ডেনপাস এক্সপ্রেস (Goldenpass Express)-এ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ। ট্রেনের বিশাল জানালা দিয়ে দেখা যায় সবুজ ঘাসযুক্ত মাঠ, শান্ত হ্রদ এবং বরফের মতো সাদা পাহাড়ের দৃশ্য।
স্পিয়েজ-এ লেক থুন-এর পাশে হেঁটে বেড়ানো মনকে শান্তি এনে দেয়। এরপর, ইন্টারলাকেন-এর উদ্দেশে রওনা হওয়া যায়।
এখানে রয়েছে ইয়ংফ্রাউ পর্বতমালা, যা পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়।
লুসানে ভ্রমণ, যা একসময় অভিজাতদের খেলার স্থান ছিল, এখানকার রেউস নদী শহরটিকে দুটি অংশে বিভক্ত করেছে। এখানকার ১৪ শতকের তৈরি চ্যাপেল ব্রিজ (Chapel Bridge) অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
এরপর গথার্ড প্যানোরামা এক্সপ্রেস (Gotthard Panorama Express)-এ চড়ে লেক লুসার্নের উপর দিয়ে ভ্রমণ করা এক দারুণ অভিজ্ঞতা। মেঘমুক্ত দিনে এই পথে পাহাড়ের চূড়ায় থাকা বরফ দেখা যায়।
লোকার্নো শহরের পুরনো বাড়িগুলো বিভিন্ন রঙে সজ্জিত, যা শহরটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। এখানকার হোটেল গার্নি মুরাতো (Hotel Garni Muralto) থেকে লেক ম্যাজোরের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়।
ব্রিসাগো দ্বীপপুঞ্জের (Brissago Islands) বোটানিক্যাল গার্ডেন-এ নানান ধরনের ফুল ও গাছপালা দেখা যায়, যা প্রকৃতি প্রেমীদের মন জয় করে। অবশেষে, সেন্টোভ্যালি এক্সপ্রেস-এ চড়ে সিওন-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করা যেতে পারে।
সুইজারল্যান্ডের এই ট্রেন ভ্রমণ শুধু একটি সাধারণ ভ্রমণ নয়, বরং প্রকৃতির কাছাকাছি আসার এক দারুণ সুযোগ। এখানকার প্রতিটি শহর, প্রতিটি দৃশ্য যেন এক একটি ছবি।
এই ভ্রমণের মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়।
সুইজারল্যান্ডে ভ্রমণের খরচ সম্পর্কে ধারণা দিতে গেলে, সুইস ট্রাভেল পাসের দাম প্রায় ২৫,০০০ টাকার মতো (পরিবর্তনশীল)। এই পাস-এর মাধ্যমে আপনি সুইজারল্যান্ডের আকর্ষণীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারেন এবং একই সাথে এখানকার জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান