গাজা পুনর্গঠন পরিকল্পনা: ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) বিরোধ
গাজায় মানবিক সংকট মোকাবিলায় মিশরের নেতৃত্বে একটি বিশাল পুনর্গঠন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য হলো ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নের পরিকল্পনার প্রতিরোধ করা।
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাজায় প্রায় ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫.৬ লক্ষ কোটি টাকা) ব্যয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করার কথা রয়েছে। তবে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইসরায়েলের তীব্র বিরোধিতা এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) দুর্বলতা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গাজার বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং সেখানকার মানবিক সংকট বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
অনেক বছর ধরে চলা এই দ্বন্দ্বে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজার এই পুনর্গঠন পরিকল্পনা তাই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে।
মিশরের এই পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়েছে আরব দেশগুলো, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ। এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো, গাজায় একটি স্থানীয় স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা, যারা প্রথম ছয় মাস ধরে এই অঞ্চলের পুনর্গঠন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এরপর ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের হাতে শাসনভার হস্তান্তরের কথা রয়েছে।
কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) কোনো ভূমিকা গ্রহণে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। নেতানিয়াহুর মতে, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা পেলে গাজা ও পশ্চিম তীরের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্যের পথ খুলে যাবে, যা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের আলোচনাকে নতুন করে শুরু করতে সহায়তা করবে।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নিজেদের উপনিবেশ বিস্তারের চেষ্টা করছে এবং তারা ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা চায় না।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) দুর্বলতাও এই পরিকল্পনার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের জনপ্রিয়তা কমেছে এবং তারা রাজনৈতিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েছে।
২০০৬ সালের পর থেকে এখানে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত রাখা, স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন করার কারণে আব্বাসের নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
পিএ-এর এই দুর্বলতা গাজায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের এই দুর্বলতার কারণে আরব দেশগুলো গাজায় একটি কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য অংশীদার খুঁজে পেতে সমস্যা অনুভব করছে। ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন নেতৃত্ব আনার চেষ্টা চললেও প্রেসিডেন্ট আব্বাস এতে রাজি নন।
এমনকি, সম্প্রতি কাতারে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়া ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিদেরও তিনি বাধা দিয়েছেন।
গাজার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। এই মুহূর্তে প্রয়োজন ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন।
যদি ইসরায়েল তাদের বিরোধিতা অব্যাহত রাখে, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা দুর্বল থাকে, তাহলে এই পরিকল্পনা সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা