ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) প্রযুক্তি: শারীরিক কষ্টের উপশমে নতুন দিগন্ত?
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা ভিআর প্রযুক্তি দ্রুত প্রসার লাভ করেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে শুরু করে বিনোদন জগৎ পর্যন্ত, এর প্রভাব এখন সুস্পষ্ট।
ভিআর প্রযুক্তি মানুষকে এক নতুন জগতে প্রবেশ করতে সাহায্য করে, যেখানে তারা ত্রিমাত্রিকভাবে বিভিন্ন দৃশ্য অনুভব করতে পারে। কিন্তু এই প্রযুক্তির ব্যবহার কি কেবল গেমিং বা সিনেমা দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ?
সম্প্রতি, যুক্তরাজ্যের একজন লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, ভিআর প্রযুক্তি শারীরিক কষ্টের উপশমেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ডেবোরা হার্ডিং নামের ওই লেখক দীর্ঘদিন ধরে ঘাড় ও কাঁধের ব্যথায় ভুগছিলেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার কাঁধের একটি টেন্ডন ছিঁড়ে গেছে এবং ঘাড়ের ডিস্কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার কারণে হাতে অবিরত ব্যথা অনুভব করতেন তিনি।
দৈনন্দিন কাজকর্মেও এর প্রভাব পড়ছিল, বিশেষ করে কম্পিউটারে কাজ করা ছিল কষ্টকর। ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার পরেও তেমন কোনো সুফল পাচ্ছিলেন না তিনি।
এমন পরিস্থিতিতে, একদিন একটি প্রযুক্তি পণ্যের দোকানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় ভিআর প্রযুক্তির।
প্রথমে ভিআর গগলস সম্পর্কে খুব একটা ধারণা ছিল না তার। কিন্তু যখন তিনি এই গগলস ব্যবহার করা শুরু করলেন, তখন এক নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন।
চোখের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত (আই-ট্র্যাকিং) এবং কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত (ভয়েস কন্ট্রোল) প্রযুক্তির কারণে তার জন্য এটি ব্যবহার করা সহজ হয়ে ওঠে। ভিআর-এর মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক জগতে প্রবেশ করে তিনি বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে শুরু করেন।
এমনকি, ডাইনোসরের মতো বাস্তবসম্মত দৃশ্যও উপভোগ করেছেন, যা তাকে মুগ্ধ করেছে।
ভিআর-এর জগতে, হার্ডিং তার শারীরিক কষ্ট অনেকটাই অনুভব করা বন্ধ করে দেন। এই প্রযুক্তি তাকে কাজের সুযোগ করে দেয়, যা অস্ত্রোপচারের আগে এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তিনি জানান, এই গগলস-এর কারণে তিনি ব্যথামুক্ত হয়ে কাজ করতে পারছিলেন এবং মানসিক স্বস্তিও অনুভব করেছেন।
তবে, ভিআর প্রযুক্তির কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এর উচ্চ মূল্য একটি প্রধান সমস্যা।
ভিআর গগলস-এর দাম এখনো বেশ বেশি, যা সবার জন্য সহজলভ্য নয়। এছাড়া, অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে, যা হার্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছিল।
বাংলাদেশেও ভিআর প্রযুক্তির সম্ভাবনা বাড়ছে। বিশেষ করে, স্বাস্থ্যখাতে এর ব্যবহার নিয়ে নতুন গবেষণা শুরু হয়েছে।
শারীরিক পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে (rehabilitation centers) ভিআর-এর মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়াও, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রমেও এই প্রযুক্তি কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তির পুনর্বাসনে ভার্চুয়াল জগতের অভিজ্ঞতা কাজে আসতে পারে, যা তাদের মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতাকে ত্বরান্বিত করবে।
সরকারের উচিত ভিআর প্রযুক্তির সুবিধাগুলো সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং এর সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা। এতে করে, বাংলাদেশের মানুষও এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুফল পেতে পারবে এবং শারীরিক কষ্টের সঙ্গে লড়াই করা আরও সহজ হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান