পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বোমা হামলা, দায়ী বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়িবহরে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত পাঁচ জন নিহত এবং বহু লোক আহত হয়েছে।
রোববার (গতকাল) নৌশকি জেলার কাছে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)।
পুলিশ জানিয়েছে, নৌশকিতে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি গাড়িবহরে রাস্তার পাশে পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরিত হয়। হামলায় আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যারা বেলুচিস্তানের শান্তি নষ্ট করতে চায়, তাদের কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও এই হামলার নিন্দা করে শোক প্রকাশ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে এই হামলাকে পাকিস্তানের জন্য উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, নৌশকি থেকে ইরান সীমান্তের কাছে তাফতানে নিরাপত্তা কর্মীদের নিয়ে যাওয়া অন্তত আটটি বাসের একটি বহরে হামলা চালানো হয়।
প্রথমে একটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরিত হয় এবং পরে হামলাকারীরা গুলি চালায়। স্থানীয় সূত্রগুলো হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
এর আগে, গত সপ্তাহে বিএলএ জাফরাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন হাইজ্যাক করে প্রায় চারশ’ যাত্রীকে জিম্মি করে।
নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালিয়ে ৩৩ জন হামলাকারীকে নিহত করে এবং জিম্মিদের উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় ২৬ জন নিহত হয়েছিল, যাদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও ছিলেন।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মিডিয়া উইং ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর)-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে এই হামলার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি, বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসী ঘটনার পেছনে এবং এর আগে হওয়া ঘটনার মূল পৃষ্ঠপোষক হলো আমাদের পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশী দেশ ভারত।’
বেলুচিস্তানে কয়েক দশক ধরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
এই অঞ্চলে বিএলএর মতো বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সক্রিয়তা রয়েছে, যারা পাকিস্তানের থেকে বেলুচিস্তানের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়।
২০০৬ সাল থেকে বিএলএকে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে।
বেলুচিস্তান পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ, যার জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ।
প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর হলেও এই অঞ্চলটি তুলনামূলকভাবে অনুন্নত।
বেলুচ সম্প্রদায়ের মানুষেরা পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৩.৬ শতাংশ।
স্থানীয় বেলুচ জনগণের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার তাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করে।
যদিও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
অন্যদিকে, খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশেও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গন্দাপুর এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।
তবে হতাহতের সংখ্যা জানা যায়নি।
তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা ওই প্রদেশে ১৬টি হামলা চালিয়েছে।
আফগানিস্তানের তালেবানের সঙ্গে আদর্শিক মিল রয়েছে টিটিপির।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা বেড়েছে, যার মধ্যে টিটিপির দায় স্বীকার করা কয়েকটি হামলাও রয়েছে।
গত বছর এসব হামলায় ১৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা