কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি মোকাবিলায় ইউরোপে জোট গড়তে তৎপর
ওটোয়া, কানাডা: সম্প্রতি কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন মার্ক কার্নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এবং কানাডার সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকির প্রতিক্রিয়ায় তিনি এখন ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছেন।
এর অংশ হিসেবে, কার্নি ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে জোট গঠনের উদ্দেশ্যে প্যারিস ও লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন।
মার্ক কার্নি তার প্রথম বিদেশ সফরের জন্য এমন দুটি দেশকে বেছে নিয়েছেন, যারা একসময় কানাডার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। শুক্রবার শপথ গ্রহণের সময় কার্নি উল্লেখ করেন, কানাডা তিনটি জাতির সংহতি – ফরাসি, ইংরেজি এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের -এর ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কানাডা “কোনোভাবেই, কোনো পরিস্থিতিতেই” যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হবে না।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমেরিটাস নেলসন ওয়াইজম্যানের মতে, “ট্রাম্প ফ্যাক্টরই এই সফরের মূল কারণ। কার্নিকে এখন ট্রাম্পের চাপিয়ে দেওয়া অনেক কিছুই সামলাতে হচ্ছে।”
৫৯ বছর বয়সী প্রাক্তন এই কেন্দ্রীয় ব্যাংকার সোমবার প্যারিসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
এরপর তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে লন্ডনে মিলিত হবেন। এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হলো বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত করা এবং সম্ভবত ট্রাম্পের শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া।
এছাড়াও, কার্নি কানাডার রাষ্ট্রপ্রধান রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
যুক্তরাজ্যের সফরটি কার্নির জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ তিনি একসময় ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের গভর্নর ছিলেন।
উল্লেখ্য, তিনি ছিলেন ব্যাংকটির ৩০০ বছরের বেশি সময়ের ইতিহাসে এই পদে আসীন প্রথম অ-ব্রিটিশ নাগরিক।
এরপর, কার্নি কানাডার আর্কটিক অঞ্চলের দিকে যাবেন, যার মূল উদ্দেশ্য হলো “কানাডার আর্কটিক নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব” পুনরায় নিশ্চিত করা।
সেখান থেকে তিনি অটোয়ায় ফিরে আসবেন এবং ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক দিনের মধ্যেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের আগ্রাসী বাণিজ্য নীতির কারণে কানাডিয়ানদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
ট্রাম্পের ‘কানাডাকে ৫১তম মার্কিন রাজ্য বানানোর’ মন্তব্যের জেরে অনেকেই এখন আমেরিকান পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকছেন।
কার্নি সরকার ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মার্কিন তৈরি F-35 যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই অর্থনৈতিক যুদ্ধের কারণে ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি নির্বাচনে অপ্রত্যাশিতভাবে সুবিধা পেতে পারে।
কারণ, ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে দেশের মানুষ এখন তাদের পাশে চাইছে।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের কানাডিয়ান ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট বোথওয়েলের মতে, কার্নি এখনই ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজি না হয়ে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন।
বোথওয়েল বলেন, “ওয়াশিংটনে যাওয়ার কোনো মানে নেই। জাস্টিন ট্রুডোর (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে ট্রাম্পের আচরণ দেখিয়ে দিয়েছে, এর ফল হলো অতিথিদের অপমানিত করার এক নগ্ন চেষ্টা।”
অন্যদিকে, মন্ট্রিলে অবস্থিত ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড্যানিয়েল বেল্যান্ড বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে কানাডার জন্য বাণিজ্য সম্পর্ককে বহুমুখী করা অত্যন্ত জরুরি।
বর্তমানে কানাডার রপ্তানির ৭৫ শতাংশেরও বেশি যুক্তরাষ্ট্রে যায়।
আর্কটিক অঞ্চলের সার্বভৌমত্বও কানাডার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বেল্যান্ডের মতে, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কানাডা ও গ্রিনল্যান্ড নিয়ে আগ্রাসী কথাবার্তা এবং শক্তিশালী আর্কটিক শক্তি হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আপাত বোঝাপড়া এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।”
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস